শুল্ক ও আর্থিক লেনদেনে কিছু জটিলতার কারণে রাশিয়ার বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। তবে সম্প্রতি ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর ফলে রাশিয়ায় দেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলারের সম্ভাবনাময় নতুন বাজার খুলতে যাচ্ছে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত ৩১ মে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অবস্থিত ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের (ইইসি) সদর দপ্তরে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে ‘মেমোরেন্ডাম অব করপোরেশন বিটুইন দি ইউরেশিয়া ইকোনমিক কমিশন অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এই সমঝোতা সইয়ের ফলে দেশের রপ্তানির দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক খাতের নিট পণ্যের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশাল শুল্ক দিয়ে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি করতে হয়। এটা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ। এদিকে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মোহাম্মদ নাছির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাশিয়া তৈরি পোশাক খাতের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বড় বাজার। কিন্তু ওই বাজারে শুল্ক বাধাসহ নানা রকম প্রতিবন্ধকতার কারণে ওই বাজারে আমাদের অংশগ্রহণ একেবারেই কম। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি যে সমঝোতা সই হয়েছে এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাজমান প্রতিকূলতা দূর হবে। একই সঙ্গে রাশিয়ায় তৈরি পোশাক খাতের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলারের সম্ভাবনার বাজার খুলতে সহায়ক হবে।’
রাশিয়ার বাজার সম্পর্কে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এটা প্রায় ইউরোপের সমান বাজার। এ ছাড়া রাশিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জনগণের ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেশি। ফলে বাংলাদেশের পণ্যের নতুন বাজার হিসেবে রাশিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি সরকারের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সাফল্য বলেও তিনি মনে করেন। বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত সহযোগিতা চুক্তিটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্যসচিব মো. মফিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার বাজারে রপ্তানি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়ে আসছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে কোনো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় এবং রাশিয়া ইইসির আওতায় গঠিত কাস্টমস ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় এককভাবে রাশিয়ার পক্ষে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তবে এই সমঝোতা সইয়ের ফলে ইউরেশিয়ান একটি বড় বাজারে আমাদের সম্ভাবনা বেড়ে গেল।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। যে কারণে বাংলাদেশ এ বাজারে বড় ধরনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে। তারা জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের জোটভুক্ত দেশ উজবেকিস্তান, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মলদোভা, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের ভালো বাণিজ্যিক যোগাযোগ রয়েছে। এসব দেশের মানুষ অবাধে রাশিয়ায় যাতায়াত করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশের ৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য, যা আগেরবারের চেয়ে ৩০.৯ শতাংশ বেশি। আর একই সময়ে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৭৬ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পণ্য, যা আগেরবারের চেয়ে .৬ শতাংশ কম।
ঢাকা চেম্বারের পরিচালক ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. রাশেদুল করিম মুন্না কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকার পর পূর্ব ইউরোপের গতিশীল অর্থনীতির সম্ভাবনাময় দেশ রাশিয়া। তবে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশ কিছু বাধা রয়েছে দেশটির সঙ্গে। আমাদের প্রত্যাশা, এই সমঝোতা চুক্তি দুই দেশের বাণিজ্য উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’