বাংলাদেশে বহুমুখী পাটপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের অভাব অনেক আগে থেকেই অনুভূত হয়ে আসছে। এরূপ কেন্দ্রের অভাবে বহুমুখী পাটপণ্য উদ্যোক্তাগণ তাদের পাটপণ্য পরিচিতি ও বিপণনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ডিজাইনের বহুমুখী পাটপণ্য প্রর্দশন ও বিক্রয়ের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ৯৯ মতিঝিলের করিম চেম্বারের ২য় তলায় বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
বুধবার পাট শিল্পের রক্ষাকল্পে অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ এই কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী ক্রেতাদের একই জায়গা থেকে পছন্দমতো বহুমুখী পাটপণ্য পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাটের হারানো গৌরব ফিরে পেতে এই বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বুধবার রাজধানীর মতিঝিলের করিম চেম্বারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়াধীন সংস্থাটির বহুমুখী পাটপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এছাড়াও গুলনার নাজমুন নাহার (অতি: সচিব), পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক শামসুল আলম, জেডিপিসির নির্বাহী পরিচালক রীনা পারভীন, বাংলাদেশ জুট ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিডিজেএমইএ) আহ্বায়ক রাশেদুল করিম মুন্নাসহ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ও জেডিপিসির কর্মকর্তাবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাটপণ্যের নানামুখী উৎপাদন ও বিপণন হলেও নির্দিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্রের অভাবে দেশী-বিদেশী বড় ক্রেতারা এসব পণ্য সম্পর্কে জানতে পারত না। ফলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ কারণে এসব পণ্যের নির্দিষ্ট স্থানে বিপণনের ব্যবস্থা করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)। বুধবার থেকে স্থায়ীভাবে এ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে দেশে উৎপাদিত ২৮০টি পাটপণ্যের প্রদর্শনী শুরু হলো।
অনুষ্ঠানে মাননীয় মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে আবারও সোনালী আঁশের দেশ হিসেবে রূপান্তর করে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। জেডিপিসি’র উদ্যোগে মতিঝিলে ২য় বহুমুখী পাটপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধন করার মাধ্যমে এটা আবারও প্রমাণিত হলো।’ এছাড়াও ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ সুষ্ঠুভাবে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, পাট সোনালি আঁশ নামে খ্যাত বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। দেশের চার কোটিরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি, দেশের অভ্যন্তরের পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে বর্তমান সরকার। দেশী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত বহুমুখী পাটপণ্য এক জায়গা থেকে প্রদর্শন ও বিক্রির উদ্দেশে এ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী ক্রেতারা একই জায়গা থেকে পছন্দমতো বহুমুখী পাটপণ্য সম্পর্কে ধারণা নিতে এবং তা ক্রয় করতে পারবেন। পাটের হারানো গৌরব ফিরে পেতে এ বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
সভায় জানানো হয়, পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধি ছাড়া শুধু সনাতনী পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে পাটকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এ উপলব্ধি থেকে বহুমুখী পাট শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে ২০০২ সালে জেডিপিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে উচ্চমূল্য সংযোজিত বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিপণনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এর মাধ্যমে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ ও ব্যবহারের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তাগণ দৃষ্টিনন্দন পাটপণ্য উৎপাদন করছেন যার অধিকাংশই বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। পাটের বহুমুখীকরণে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রোমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এ পর্যন্ত প্রায় ৭০২ জন উদ্যোক্তা তৈরি করেছে। এ সকল উদ্যোক্তা ২৮০ প্রকারের বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করছেন। বর্তমানে বহুমুখী পাটপণ্য বিশ্বের প্রায় ১১৮টি দেশে রফতানি হচ্ছে।
উদ্যোক্তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য জেডিপিসি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, সচেতনতামূলক কর্মশালা এবং বহুমুখী পাটপণ্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে মেলার আয়োজন করে থাকে। উদ্যোক্তাদের সুলভমূল্যে কাঁচামাল সরবরাহ করার জন্য ঢাকা এবং রংপুরে ২টি কাঁচামালের ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বহুমুখী পাটপণ্যের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে জেডিপিসিতে প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার ফার্মগেটে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) ২৮০ প্রকার পাটপণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র চালু রয়েছে।
মতিঝিলের করিম চেম্বারে আরও একটি স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। এতে পাটপণ্য উৎপাদনকারীগণ উপকৃত হবে, দেশী-বিদেশী ক্রেতাগণ উৎসাহিত হবে। বহুমুখী পাটপণ্য বিদেশে আরও প্রসারের জন্য বিভিন্ন মেলা-প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ৩ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ০৫ দিনব্যাপী পাটপণ্যের মেলায় ৩০টি স্টলে বহুমুখী পাট পণ্য বিক্রয় ও প্রদর্শনী ব্যবস্থা থাকবে।