আভিজাত্যের আসনে ফিরছে পাট ও পাটশাক। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পাটের আধিপত্য এখনো বিরাজমান বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এর মহাপরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান এবং পিএসও ড. এ টি এম মোরশেদ আলম। তারা জানান, এ দেশে প্রতি বছর গড়ে ছয় থেকে সাত লাখ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়ে থাকে। এতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ বেল পাট আঁশ উৎপাদিত হয়। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের শতকরা চার থেকে পাঁচ ভাগ আসে পাট থেকে।
বর্তমান সরকার পাটকে তার ঐতিহ্যের স্থানে ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর আলোকে পণ্যে পাটের মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ হয়েছে। প্রথমে ছয়টি (ধান, গম, চাল, ভুট্টা, চিনি ও সার) পণ্যের ক্ষেত্রে আইনটি পাস হয়েছিল। বর্তমানে আরো ১৩টি সহ মোট ১৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইনটি সম্প্রসারিত হয়েছে।
পাট ও সমজাতীয় আঁশ ফসল হিসেবে ব্যবহার হলেও পাটের পাতা প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কাজেই পাট পাতা ও মেস্তার ক্যালিক্স (চুকুর) খাদ্য নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি ও ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। পাট পাতার রস রক্ত পিত্তনাশক, বাত নিরোধক, ক্ষুধা বৃদ্ধিকারক, আমাশয়, উদারময় ও অম্লরোগের মহৌষধ। শুকনো পাতা গুঁড়া করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে রোগ মুক্তির জন্য এবং কাঁচা পাট শাক হিসেবে বহুকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ দেশের বিরাট একটি অংশে দেশি ও তোষা পাটের চাষ হয়। তাছাড়াও দেশের চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ী অঞ্চলে এবং মিসর, আরব ও প্যালেস্টাইনে বাগানের সবজি হিসেবে পাট চাষের প্রচলন আছে।
একজন বিশিষ্ট পাট বিজ্ঞানীর একটি প্রবন্ধের বরাত দিয়ে বিজেআরআই মহাপরিচালক এবং পিএসও জানান, ‘সেই নারী ভাগ্যবতী, যিনি প্রত্যেহ স্বামীকে গরম ভাতের সঙ্গে ঘি, মাছের ঝোল ও পাটশাক সহযোগে আহার্য পরিবেশন করেন’। এ যুগের নারীদের বেলায় একথা কতোটুকু পালনীয় সেদিকে দৃষ্টি না দিলেও, একথা অবশ্যই বিশ্বাস করতেই হবে যে, শ্লোকের বক্তব্যে প্রাচীন বাংলার বক্তব্যে পাট শাকের জনপ্রিয়তা ও আভিজাত্যের উপস্থিতি ছিলো।