দেড় বছরের মধ্যে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৭ সালে ৫০৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তখন রপ্তানি কমেছিল সাড়ে ৪ শতাংশ। আর চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৩০৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ সময়ে রপ্তানি বেড়েছে গত বছরের প্রথমার্ধের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধির বিচারে বাজারটিতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম ২০১৭ সালে ১ হাজার ১৫৬ কোটি ডলার পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি করেছিল ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সেটি বেড়ে ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। তার বিপরীতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি পৌনে ৩ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি বাজারটিতে শীর্ষ পর্যায়ের রপ্তানিকারক দেশ চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও মেক্সিকোর চেয়ে প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। যদিও পোশাক রপ্তানির পরিমাণের দিক দিয়ে চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক আমদানির হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরেছে। তাদের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৪ হাজার ৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার মধ্যে শীর্ষ ছয় দেশ থেকে ২ হাজার ৬৮৭ কোটি ডলারের পোশাক গেছে।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাজারটিতে রপ্তানি কমে যায়। ২০১৭ সালে ৫০৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হলেও তা ছিল ২০১৬ সালের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ কম। দীর্ঘ ১৫ মাস পর গত বছরের জানুয়ারিতে এই বাজারে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত গত বছর সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ৫৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ক্রয়াদেশ আসছে প্রচুর। তবে সমস্যা হচ্ছে, ‘পোশাকের দাম কমিয়ে দিয়েছে ক্রেতারা। সেটি না হলে যে পরিমাণে ক্রয়াদেশ আসছে তাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়ে যেত ২০-২৫ শতাংশের মতো।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি বাড়াতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাজারটিতে রপ্তানি বাড়াবে বলে মন্তব্য করেন মোহাম্মদ হাতেম।
কার রপ্তানি কত?
এ বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে চীন। তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাত্র দশমিক ৫৮ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। তারপরেই আছে বাংলাদেশ। বাজারটিতে ৪ নম্বর অবস্থান নিয়ে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভারতকে পেছনে ফেলে ইন্দোনেশিয়া চতুর্থ অবস্থান দখল করেছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করেছে ২২৭ কোটি ডলারের পোশাক। দেশটির রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের রপ্তানি ২২৬ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের প্রবৃদ্ধি অবশ্য ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বেশি, ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ ছাড়া মেক্সিকো ১৬০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে। যদিও দেশটির রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৩ শতাংশ।