ঈদুল আজহায় পশুর চামড়া কিনতে এবার বড় অঙ্কের অর্থায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। আগের ঋণ নবায়নসহ প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো ঋণ দিচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। নতুন-পুরনো প্রায় ২৪টি প্রতিষ্ঠান এ ঋণ পাচ্ছে। এর বাইরে বেসরকারি খাতের উত্তরা, ন্যাশনালসহ আরো কিছু ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দিচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এর পরিমাণ জানা যায়নি। এদিকে আজ মঙ্গলবার চামড়ার মূল্য নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হবে। এতে চামড়াশিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
চমড়া খাতের বিকাশের স্বার্থে প্রতিবছরই চামড়া খাতে ঋণ দিয়ে আসছে ব্যাংকগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা জানিয়েছেন, যারা প্রতিষ্ঠিত ট্যানারি এবং ঋণ নিয়ে যথাসময়ে ফেরত দেয়, তারাই এবার ঋণ পাচ্ছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বছরে যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদে। এ সময় সংগৃহীত চামড়ার মানও ভালো হয়। কারণ কোরবানির পশুগুলো হয় স্বাস্থ্যবান ও হৃষ্টপুষ্ট। জানা যায়, ঈদুল আজহায় আড়তদারদের মাধ্যমে প্রচুর চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা। ফলে তাঁদের বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয়। তাঁদের এ চাহিদা পূরণ করে ব্যাংকগুলো।
এবার পশুর চামড়া কিনতে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটি আগের ঋণ নবায়নসহ প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে। এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের এমডি মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার নতুনভাবে ২০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া রিনিউ হবে আরো এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হবে। নতুন-পুরনো ৯ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। চামড়া খাতের ঋণ আদায়ের হার কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রিসেন্ট গ্রপের ঋণ অনিয়মের কারণে এ খাতে ঋণ আদায় হার খুবই কম।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫০ কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে রূপালী ব্যাংক। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘এবার চামড়া খাতে সব মিলিয়ে আমরা ২৫০ কোটি টাকার মতো ঋণ দেব। চারটি প্রতিষ্ঠানকে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গতবারও আমরা দিয়েছিলাম ১৭৫ কোটি টাকার মতো।’ এ খাতের ঋণের আদায়ের হার কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছর যেসব ঋণ দিয়েছিলাম তার আদায়ের হার আশাব্যঞ্জক।’ এ ছাড়া আগের কিছু খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এবার চামড়া খাতে অগ্রণী ব্যাংকেরও ঋণ বিতরণ বাড়ছে। এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মো. শামস্-উল ইসলাম বলেন, ‘গতবার আমরা চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১৪৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিলাম। এবার সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ১৬০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে।’
সোনালী ব্যাংক গতবারের মতো এবারও ৭০ কোটি টাকার ঋণ দেবে। গতবার যে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছিল তারাই এ ঋণ পাচ্ছে। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি উবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘আমরা এবার তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৭০ কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছি। এর মধ্যে আমিন ট্যানারিকে ২৫ কোটি, কালাম ব্রাদার্সকে ২০ কোটি ও ভুলুয়া ট্যানারিকে ২৫ কোটি টাকা। আগের বছরও এ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে একই পরিমাণ ঋণ দিয়েছিলাম।’