২০১৮ সালে বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের জুতার রপ্তানি মূল্য ছিল ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যার ৩৯ শতাংশ আসে চামড়াজাত জুতা থেকে। সব ধরনের জুতার ব্যবহার, তৈরি ও রপ্তানিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন। ২০১৮ সালে বিশ্বে চামড়ার তৈরি যত জুতা রপ্তানি হয়, তার ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ এ দেশটির দখলে। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬তম। গত বছর বিশ্বে রপ্তানি হওয়া চামড়াজাত জুতার ১ দশমিক ২ শতাংশ ছিল বাংলাদেশের দখলে, যার মূল্যমান ছিল ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের তথ্য নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডসটপএক্সপোর্টডটকম (ডব্লিউটিএক্স) সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি বিশ্বে চামড়ার তৈরি জুতার বাজার নিয়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে প্রায় ৫ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারের চামড়ার তৈরি জুতা বিক্রি করেছে রপ্তানিকারক দেশগুলো। বিশ্বে চামড়াজাত জুতার রপ্তানি মূল্যের ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে শীর্ষ ১৫ দেশ। সংখ্যাগত দিক দিয়ে কম পরিমাণের জুতা রপ্তানি করেও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইতালি। গত বছর এ দেশটি ৮০১ কোটি ডলার মূল্যের চামড়াজাত জুতা রপ্তানি করে। ফুটওয়্যার শিল্পে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর উৎপাদন, ব্যবহার ও আমদানি-রপ্তানির তথ্য সংগ্রহের পর তা বিশ্লেষণ করে থাকে পর্তুগালভিত্তিক জুতা প্রস্তুতকারকদের সংগঠন পর্তুগিজ ফুটওয়্যার, কম্পোনেন্টস, লেদারগুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এপিআইসিসিএপিএস)। এই সংগঠনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বের বস্ত্র, চামড়াসহ সব ধরনের মোট ২ হাজার ৪২০ কোটি জোড়া জুতা উৎপাদন হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। রপ্তানি হওয়া এসব জুতার বাজারমূল্য ছিল ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। জুতা তৈরিতে একচেটিয়া প্রাধান্য রয়েছে এশিয়ার। পুরো বিশ্বের ১০ শতাংশের ৯ শতাংশ জুতাই এই মহাদেশে উৎপাদন হয়। আবার জুতার ব্যবহারও এখানেই বেশি। রপ্তানিতে প্রাধান্য বিস্তার করলেও চামড়াজাত জুতার রপ্তানি মূল্যের ৫১ শতাংশের হিস্যা রয়েছে এ অঞ্চলটির। বিগত বছরগুলোতে দেশের ফুটওয়্যার শিল্পে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত হওয়ায় প্রতি বছরই চামড়াজাত পণ্য ও জুতার উৎপাদন বাড়তে দেখা গেছে। ২০১৪ থেকে ১৬ সময়ে দেশের জুতার উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৮ শতাংশের বেশি। তবে ২০১৭ সাল থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে দেশে কাঁচা চামড়া সর্বনিম্ন দরে বিক্রির পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও কমতে দেখা গেছে। যদিও এ সময়ে বিশ্বে চামড়াজাত জুতার রপ্তানি আয় বেড়েছে। গত বছর বিশ্বে চামড়াজাত জুতার রপ্তানি মূল্যে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময়ে দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। ডব্লিউটিএক্সের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মোট ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ৮৬ হাজার ডলারের চামড়াজাত জুতা রপ্তানি করে। এতে চামড়াজাত জুতা রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ১৬তে। এই খাতের সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা দেশ কম্বোডিয়া রয়েছে ১৫তম অবস্থানে। গত চার বছরে চামড়াজাত জুতা রপ্তানিতে কম্বোডিয়া দ্বিগুণেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। একই সময়ে উৎপাদনে সংখ্যাগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালের পর কম্বোডিয়া ছাড়াও চামড়াজাত জুতা রপ্তানিতে পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও জার্মানি বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ সময় পোল্যান্ডের ১১৭, ভিয়েতনাম ৫৫ দশমিক ৬ ও জার্মানি ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। বিপরীতে হংকং ৫১, চীন ২৭ দশমিক ৯, স্পেন ২০ দশমিক ৪, নেদারল্যান্ডস ১৩ দশমিক ৫ ও ইতালি ১১ দশমিক ৪ শতাংশ রপ্তানি বাজার হারিয়েছে। ২০১৮ সালে চীন ৯০১ কোটি ডলার মূল্যের চামড়াজাত জুতা রপ্তানি করে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। ইতালি ৮০১ ডলার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বে চামড়াজাত জুতা রপ্তানি মূল্যের ১৪ দশমিক ৫ শতাংশের বাজার রয়েছে দেশটির। ভিয়েতনাম ৬৭০ কোটি ডলারের চামড়াজাত জুতা রপ্তানি করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এর পরের অবস্থান জার্মানির। দেশটি গত বছর ৩৬০ কোটি ডলার মূল্যের চামড়াজাত জুতা রপ্তানি করে। এর বাইরে চামড়াজাত জুতা রপ্তানির শীর্ষ ১৫ দেশের তালিকায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, ভারত, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, হংকং, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।