Home Apparel শিল্পের প্রসারে মিড লেভেল শোধরাতে হবে: রুবানা হক

শিল্পের প্রসারে মিড লেভেল শোধরাতে হবে: রুবানা হক

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, আমাদের পরিবারেও অনেক ঝামেলা তৈরি হয়। আমরা নিজেরাই তো সেইগুলোর সমাধান করি। শিল্প-কারখানাও এর ব্যতিক্রম না। এখানেও নানা সময়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। সমস্যা আসে মিড লেভেল (মধ্যবিত্ত) থেকে, তবে কোনো সমস্যাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। শিল্পের প্রসার ঘটাতে হলে অবশ্যই এই মিড লেভেলকে শোধরাতে হবে।  রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা- আইওএম ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সরবরাহ প্রক্রিয়ায় শ্রমের নৈতিক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ড. রুবানা হক বলেন, মিড লেভেল শুধরানোর পাশাপাশি মালিকদেরও শ্রমবান্ধব হতে হবে। আবার নিজেকে আত্মসমালোচনা এভাবে করতে হবে যে আমরা যদি একজন শ্রমিকের স্থানে থাকতাম, তাহলে তখন কেমন হত। মূলকথা উভয়কে ছাড় দিয়েই আমাদের শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রম বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল। আমাদের এই বিষয়টি তাই খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিৎ। পোশাক খাতে কিছু সমস্যা আছে। তবে পরিমাণ ও গুণ বিচারে এটা খুবই সামান্য। তবে এই ক্ষেত্রের উন্নয়নে অনেক কিছু করার আছে। এজন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের শ্রমিকদের জন্য সেরাটা করতে চাই। এজন্য সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। ড. রুবানা হক বলেন, এদেশ যেমন আমার, এশিল্পও আমার। আমার পরিবারের একটা অংশ আমার শিল্প। শ্রমিককে নিজের করে ভাবতে হবে, তার সমস্যার কথা শুনে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের মতো কারখানাতে মাঝে মাঝে সমস্যা তৈরি হয়, যার সমাধান নিজেকেই করতে হবে। ভাবতে হবে একজন শ্রমিক আমার পরিবারেরই অংশ। কারখানার সমস্যা সাধারণত মিড লেভেল থেকে, তাই কারখানার প্রসার ঘটাতে চাইলে আগে এই মিড লেভেল শোধরাতে হবে। আয়োজিত সেমিনারে বলা হয়, কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিবাহের কারণে বাংলাদেশের মানুষ গ্রাম থেকে শহরে যাচ্ছেন। এই অভিবাসনের শতকরা ৮০ ভাগেরই গন্তব্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম। অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারী দেশ। একই কারণে বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সেবার ক্ষেত্রে এশিয়ার তৃতীয়।  এছাড়া কৃষি পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে দেশটি। একইসঙ্গে প্রতিবছর অনেক মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। কেবল ২০১৮ সালেই সাত লাখ ৩০ হাজার মানুষ বিদেশে গেছেন। একারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং দেশের বাইরের অভিবাসন জটিল ও উদাহারণ দেওয়ার মতো একটি বিষয়। তবে নৈতিক নিয়োগ বিষয়ে সচেতনতার অভাব, সঠিক নিয়ম-নীতির প্রয়োগ না থাকা ও ব্যবসা পরিচালনায় সক্ষমতার অভাবে শ্রমিকরা ঝুঁকিতে আছেন। আইওএম বাংলাদেশ অফিসের সহকারী মিশন প্রধান ডিমাঞ্চ শ্যারন বলেন, বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের ব্যবসার উল্লেখযোগ্য সুযোগ আছে। যেখানে নৈতিক নিয়োগসহ করপোরেট দায়বদ্ধতার বৈধকরণ ক্রমশ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। শ্রমক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি টেকসই সোর্সিং এবং নৈতিক নিয়োগ নিশ্চিত করে, তাহলে বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বাড়বে।  প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন বলেন, অভিবাসন বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল বিষয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। শ্রমের অনৈতিক ব্যবহার এর মধ্যে অন্যমত। তবে ভালো বিষয় হলো, এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে দেখভাল করার জন্য আমাদের আইনি কাঠামো আছে।  এছাড়া বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করছে। এই নীতি অভিবাসন বিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের (বিআইবিএফ) সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, আমরা চাই নৈতিক শ্রম ব্যবস্থার প্রচলন হোকু। এটি আমাদের উন্নত ব্যবসায়ের পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিদের ভালো থাকার সুযোগ বাড়বে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বিজিএমইএ-এর পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, শ্রমিদকের যে কোনো বিষয় আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নেই। শ্রম আইন মানা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা একটি টেকসই ব্যবসায়ী মডেল প্রসার করতে চাই, যেখানে একটি ভালো কাঠামো থাকবে। অনুষ্ঠানে ‘দ্যা বিজনেস কেস ফর টেকিং অ্যাকশন টুওয়ার্ডস এথিকাল লেবার প্র্যাকটিস’ ও ‘দ্যা রোল অফ ইন্টারন্যাশনাল পলিসিস, রেগুলেশন্স অ্যান্ড কোড অব কন্ডাক্ট ইন বিজনেস গ্রোথ’ নামে আরও দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।  বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রেজাউল হক, চামরাজাত পণ্য, জুতা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির নির্বাহী পরিচালক কাজী রওশন আরা, আইএমও-এর লেবার মবিলিটি ও হিউম্যান ডেভলপমেন্টের প্রধান মারিনা মানকিসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here