বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা আমদানিকারক
বাংলাদেশে উৎপাদন হয় চাহিদার
মাত্র ২ ভাগ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা দামের প্রায় ৮১ লাখ বেলতুলা আমদানি করা হয়। এসময়
দেশের তুলা চাষের উপযোগী ২ লাখ হেক্টরের মধ্যে
৪৪ হাজার জমিতে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৭২ হাজার বেল। চলতি বছরে দেশে ২ লাখ ২৫ হাজার বেল তুলা উৎপাদনের লক্ষ্য
নির্ধারণ করে চাষ শুরু হয়েছে। তুলা উন্নয়ন
বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, সুতার
ওপরের ট্যাক্স
কমার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তুলার আমদানি কিছুটা কম হতে পারে।
তিনি বলেন, তুলা
বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরি ফসল। বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্প সম্পূর্ণভাবে এই তুলার ওপর নির্ভরশীল। যার
বেশিরভাগই আমদানি করা হয়ে থাকে।
চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, রংপুরে
বেশি হলেও দেশের ৩০
থেকে ৩২টি জেলায় কমবেশি তুলা উৎপাদন হয়ে থাকে। আঁশজাতীয় ফসল তুলার বীজ থেকে উপজাত হিসেবে শতকরা ১৫
থেকে ১৭ ভাগ ভোজ্যতেল এবং ৮০ ভাগ উন্নতমানের
খৈল পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে
দেশে বেসরকারিভাবে ১৮টি জিনিং শিল্পে প্রায় ১০০টি জিনিং মেশিন ও তুলার বীজ থেকে তেল আহরণের জন্য ১৫
থেকে ২০টি এক্সপিলার মেশিন
স্থাপন করা হয়েছে। অপরিশোধিত তেলকে পরিশোধনের মাধ্যমে কুষ্টিয়ায় বেসরকারি উদ্যোগে একটি রিফাইনারি
স্থাপন করা হয়েছে। এখানে বছরে প্রায় ৪ কোটি
৫৫ লাখ টাকা দামের প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল উৎপাদিত হচ্ছে। তুলার খৈল মাছ ও গবাদি পশুর
উৎকৃষ্টমানের খাবার এবং তুলা ফসল উৎপাদনের পর এর গাছ জ¦ালানি
হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে অর্থের সাশ্রয় করে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তুলা চাষ পরিবেশবান্ধব।
কারণ এর পাতা পড়ে জমির উর্বরতা
বাড়িয়ে তোলে। কৃষক ৭৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচের মাধ্যমে ১ হেক্টর জমিতে তুলা আবাদ করতে পারেন।
এতে ২ লাখ ২৫ হাজার থেকে ২লাখ ৬২ হাজার টাকা
দামের তুলা হতে পারে।
উল্লেখ্য বর্তমানে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন টন। যা
বিশ্বের তুলা
আবাদের উপযোগী ভূমির মাত্র আড়াই শতাংশ ব্যবহারে উৎপাদিত। ২০০৯ সালের হিসেবে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ তুলা
উৎপাদনকারী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এরপরই রয়েছে
ভারত। দেশ দু’টি যথাক্রমে ৩৪ মিলিয়ন ও ২৪ মিলিয়ন বেল তুলা উৎপাদন করে। কিন্তু উৎপাদিত তুলার অধিকাংশই
অভ্যন্তরিন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা
হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক বছর ধরে সবচেয়ে বড় রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে স্বীকৃত। দেশটি ৪.৯ বিলিয়ন
মার্কিন ডলার উপার্জন করেছিলো। আফ্রিকা মহাদেশ
থেকে ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলা রপ্তানী করে। ১৯৮০ সাল থেকে আফ্রিকা তুলা বাণিজ্যে দ্বিগুণ
উৎসাহ নিয়ে অংশ নিচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়
৫টি তুলা রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া এবং উজবেকিস্তান। তুলা উৎপাদনবিহীন আমদানকারীকারক দেশগুলো হচ্ছে; কোরিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়া, হংকং
এবং জাপান। বিশে^র শীর্ষ ১০টি তুলা উৎপাদনকারি দেশের মধ্যে রয়েছে; গণচীন (৩৩ মিলিয়ন বেল), ভারত
(২৭ মিলিয়ন বেল), যুক্তরাষ্ট্র
(১৮ মিলিয়ন বেল), পাকিস্তান
(১০ মিলিয়ন বেল) ব্রাজিল (৯
দশমিক ৩ মিলিয়ন বেল), উজবেকিস্তান
(৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন
বেল), অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ২ মিলিয়ন বেল, তুর্কেমিনিস্তান (১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বেল) ও গ্রিস(১ দশমিক ৪ মিলিয়ন বেল)।