Home Apparel প্রথম প্রান্তিকে পণ্য রপ্তানিতে ধস

প্রথম প্রান্তিকে পণ্য রপ্তানিতে ধস

সুখবর নিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও তৃতীয় মাসে এসেই ধস নেমেছে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে।

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৯৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। রপ্তানির এই অংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ শতাংশ কম। আর গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে ৩ শতাংশ কম। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “খুবই খারাপ অবস্থা। আমাদের সব অর্ডার ভিয়েতনাম-ভারতে চলে যাচ্ছে। সরকারের পলিসি সাপোর্ট ছাড়া এই খারাপ অবস্থা থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব না।” রোববার বিকেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যেটা মনে হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অবস্থা থাকবে। আর তাতে এবার লক্ষ্য পূরণ হওয়া তো দূরের কথা প্রবৃদ্ধিও কম হবে।” “খুব চিন্তার মধ্যে আছি আমরা। এই মুহূর্তে আমাদের পলিসি সাপোর্ট দরকার। দরকার নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো।” তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ভারত সরকার তাদের দেশের পণ্য রপ্তানির উপর ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে। আর আমাদের ১ শতাংশ সহায়তা নিয়েই নানান কথা হয়। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর অন্যান্য বিষয়ে রুবানা হকের সঙ্গে একমত হলেও নগদ সহায়তার ব্যাপারে ভিন্ন মত দিয়েছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নগদ সহায়তা দিয়ে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব নয়। এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। এই মুহুর্তে যেটা করতে হবে সেটা হল ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মান কমাতে হবে। যে কাজটি আমাদের কমপিটিটর দেশ চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম প্রতিনিয়ত করছে। গতকাল চীন তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে। আমাদেরও এখন সেই কাজটি করতে হবে।” সুখবর নিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও দ্বিতীয় মাস অগাস্টে এসেই ধাক্কা খায় রপ্তানি আয়। প্রথম মাস জুলাইয়ে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। কিন্তু অগাস্ট মাসে গতবছরের অগাস্ট মাসের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ আয় কম আসে। দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-অগাস্ট সময়ে আয় কমে যায় প্রায় ১ শতাংশ। আর এই দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ২৯১ কোটি ৫৮ লাখ  ডলার আয় করেছে। রপ্তানির এই পরিমাণ গতবছর একই মাসের তুলনায় সাড়ে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম প্রায় ৮ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ৩১৪ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পন্য রপ্তানি করেছিল। এবার সেপ্টেম্বরে ৩১৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করেছিল বাংলাদেশ। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৮০ লাখ (৯.৬৫ বিলিয়ন) ডলার। এই আয়ের ৮৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে ৮০৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের যোগান দিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এ খাতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ আয় কম হয়েছে এবার। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৪১৭ কোটি ডলার; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৮৭ শতাংশ। উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩৮৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার কারণেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানিতে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছিল ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ। আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূলত: দুটি কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে। প্রথমত: ইউরোপের দেশগুলো আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজার। সেখানে এক ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। সে কারণে সে দেশগুলোর মানুষ খরচ কমিয়ে দিয়েছে। পোশাকসহ অন্যান্য জিনিস কম কিনছে। তবে আমেরিকার অর্থনীতি চাঙ্গার কারণে সেখানকার বাজারে বাংলাদেশ ভালো করছে। দ্বিতীয় কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, “আমাদের নিজস্ব সমস্যা আছে। সেটা হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু পণ্যের দাম বাড়ায়নি বায়াররা। প্রতিযোগী দেশগুলো বাজার ধরে রাখতে তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে; আমরা সেটাও করিনি। সবমিলিয়েই আমরা পিছিয়ে পড়ছি।” আমেরিকা-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধা পাচ্ছে জানিয়ে আহসান মনসুর বলেন, “আমেরিকার বাজারে আমাদের রপ্তানি বাড়লেও অন্য দেশগুলো থেকে পিছিয়ে পড়ছি। এতোদিন ইউএস মার্কেটে আমরা ৩/৪ নম্বরে ছিলাম। এখন ৭ নম্বরে নেমে এসছি।” সবমিলিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চীন, ভিয়েতনাম, ভারতসহ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর মতো বাংলাদেশী মুদ্রা টাকার অবম্যূল্যায়নের পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চা রপ্তানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৫ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ৯ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৬৪ শতাংশ। তামাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ। হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। সার্বিক রপ্তানি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here