দেশ থেকে রফতানি হওয়া পণ্যের ৮৪ শতাংশই তৈরি পোশাক। এ পণ্যের ৮০ শতাংশই রফতানি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। সাম্প্রতিক সময় প্রচলিত এ বাজারগুলোয় পোশাকের রফতানি কমেছে বাংলাদেশের। এখন অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও পোশাক রফতানি কমছে।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, দেশ থেকে পোশাক রফতানির ৬১ শতাংশ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। আর যুক্তরাষ্ট্রে যায় ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। বিশ্বের মোট ১১টি দেশকে পোশাক রফতানির অপ্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মোট পোশাক রফতানির ১৬ শতাংশ হয় অপ্রচলিত বাজারের এ দেশগুলোয়।
ইপিবির পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ক্রমেই বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছিল ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিজিএমইএর তথ্যমতে, পোশাক রফতানির অপ্রচলিত হিসেবে বিবেচিত বাজারের দেশগুলোর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক এবং অন্যান্য। এর মধ্যে বেশি রফতানি হয় জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত ও রাশিয়ায়। এগুলোর মধ্যে ভারত ছাড়া বাকি চার দেশেই পোশাকের রফতানি কমেছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় জাপানে রফতানি বেড়েছিল ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটিতে রফতানি কমেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তবে দেশটিতে চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রফতানির এ পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।
চীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে পোশাক রফতানি বেড়েছিল ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে কমেছে ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। রাশিয়ায় ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে দেশটিতে পোশাক রফতানি কমেছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে পোশাক রফতানি সবচেয়ে বেশি কমেছে তুরস্ক, ব্রাজিল, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। তুরস্কে কমেছে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ, ব্রাজিলে ৩৪ দশমিক ১২ শতাংশ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় কমেছে ১৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বৈদেশিক বাণিজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারভেদে নতুন বাজারগুলোর সমস্যা ভিন্ন। আর এর মধ্যে শুল্ক ও অশুল্ক সব ধরনের সমস্যাই রয়েছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মুদ্রা বিনিময় মূল্যের হার রফতানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে পোশাক ক্রয়ে ক্রেতার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে তৈরি পোশাক উৎপাদন হচ্ছে না, এ কারণটিতেও গুরুত্ব দিচ্ছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের তৈরি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। কটনভিত্তিক পণ্য উৎপাদন থেকে মনোযোগ সরাতে হবে। অবশ্যই নতুন বাজারের দিকেও মনোনিবেশ করতে হবে। কিন্তু নতুন বাজারের জন্য চাহিদা ও আমাদের উৎপাদিত পণ্যের পার্থক্য রয়েছে।