পণ্য রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক। পণ্য রপ্তানিতে ভালো কোনো সংবাদ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। টানা চার মাস ধরে পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমছে। তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য—এই তিন শীর্ষ পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস, অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বরে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, কেবল গত নভেম্বরে ৩০৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৩৪২ কোটি ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে চলতি বছরের নভেম্বরে রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে। তবে পণ্য রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাতটির রপ্তানি দুই মাস ধরে কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ হাজার ৩০৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। গত অর্থবছর প্রথম পাঁচ মাসে ১ হাজার ৪১৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প
মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে গেছে। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে খরচ বাড়লেও ক্রেতারা পোশাকের দাম কমাচ্ছে। সে জন্য আমরা অনেক ক্রয়াদেশ নিতে
পারছি না। আমরা আগে ভেবেছিলাম, আগামী জানুয়ারি থেকে রপ্তানি বাড়বে। তবে ক্রয়াদেশের যে
অবস্থা দেখছি, তাতে জানুয়ারিতে ভালো কোনো সংবাদ আসবে বলে মনে হচ্ছে না।’
কিছুদিন ধরে পাট ও চামড়া খাতকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে ৪৪
কোটি ৬৩ লাখ ডলারের কৃষি
প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩৯ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের মধ্যে ৫ কোটি ৬২ লাখ ডলারের চামড়া, ৯ কোটি ৪১ লাখ ডলারের চামড়াজাত পণ্য, ২৬ কোটি ৪২ লাখ ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে।
শীর্ষ তিন পণ্যের প্রবৃদ্ধি কমলেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৪০ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১৭ কোটি ডলারের চিংড়ি, ১৪ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য, ৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে।
সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৮০৫ কোটি ডলার। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।