তৈরি পোশাক শিল্পে বৈশ্বিক প্রতিযোগী সক্ষম না হলে এ ব্যবসা ছাড়তে হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রুবানা হক গতকাল রাজধানীর ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের (ডিএসসিই) উদ্যোক্তা ক্লাবের আয়োজনে ‘স্টেট অব দি ইকোনমি ইন দি এরা অব ফোরথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন: পারস্পেক্টিভ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ডিএসসিইর উদ্যোক্তা অর্থনীতি কোর্সের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলীৃর সভাপতিত্বে সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ও ডিএসসিইর পরিচালক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। ড. রুবানা হক বলেন, এ খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়নে বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। এরই মধ্যে আমরা পাকিস্তানের কাছে ডেনিমের বাজার হারাতে শুরু করেছি। এছাড়া নতুন বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরো বেশি অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, নতুন বাজার বিশেষ করে ব্রাজিল, রাশিয়াসহ বেশকিছু দেশে রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এসব বাজারে প্রবেশ ও স্থায়ীভাবে ভালো করতে হলে অর্থনৈতিক কূটনীতির দরকার আছে। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, শ্রম মন্ত্রণালয়সহ আমাদের মধ্যে আরো বেশি সমন্বয় প্রয়োজন। কিন্তু সেটি যথাযথভাবে হচ্ছে না। পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা ভালো করছেন, কারণ সেখানে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। এসব দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম হচ্ছে। আমাদের দেশেরও বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। সংরক্ষণশীলতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা আমাদের অর্জন করতে হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন (এসইজেড) নিয়ে তিনি বলেন, ১০০টি জোন তৈরি করা হচ্ছে, কিন্তু এখানে কী ধরনের শিল্প গড়ে উঠবে, তাদের সুবিধা কী হবে, কীভাবে তারা পরিচালিত হবে—এ সম্পর্কে সঠিক কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তাই এসব দিক নিয়ে স্পষ্টতা থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহমেদ আল কবীর, জাতিসংঘের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ড. সাইদুর রহমান লস্কর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ইউল্যাবের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মোত্তালিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক কেএম জমসেদ উদ জামান, ডিএসসিইর উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেহানা পারভীন ও সারাহ তাসনীম বক্তব্য রাখেন। ব্যাংক সুদহার নিয়ে কেএম জমসেদ উদ জামান বলেন, উচ্চ সুদের কারণে খেলাপি ঋণ (এনপিএল) বাড়ছে। আর ব্যাংকগুলোর অদক্ষতার কারণেই সুদের হার নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ব্যাংক মালিক ও নির্বাহীদের সংগঠনের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। অন্যদিকে সামনের দিনে ক্রিপ্টোকারেন্সি এলে দেশের মুদ্রাবাজার ও এফডিআইতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে বলে জানান তিনি। ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, দেশের শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগকারী আনতে হবে, তবে সেক্ষেত্রে তাদের মুনাফা দেশে কীভাবে প্রত্যাবাসন হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই নীতিমালা করতে হবে। এছাড়া বিদেশে দেশের দূতাবাসগুলোকে অর্থনৈতিক কূটনীতি সফল করতে হলে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মোত্তালিব বলেন, জাপানে এখন বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তারা তরুণ ও দক্ষ শ্রমশক্তি খুঁজছে। শুধু দুটি জিনিস জানা থাকলে জাপানে এখনই কয়েক লাখ টাকা বেতনের চাকরি পাওয়া সম্ভব। এআই মেশিন চালানোর দক্ষতা এবং জাপানি ভাষা জানা থাকলেই জাপানে শ্রমশক্তি পাঠানো সম্ভব।