চট্টগ্রাম বন্দরসংশ্লিষ্ট বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালগুলোর (আইসিডি) মাশুল বেড়েছে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গতকাল থেকে বর্ধিত হারে বিল করা শুরু হয়েছে। সেবাগ্রহীতা রফতানিকারকদের অভিযোগ, একতরফাভাবে ২২ শতাংশ হারে মাশুল বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধান রফতানি পণ্য পোশাকের শিল্প মালিকরা বর্ধিত হারে এ চার্জ আদায় বন্ধে তৎপর হয়েছেন।
নতুন মাশুল হার অনুযায়ী, ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের রফতানি কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৯০ টাকা। আগে এ চার্জ ছিল ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনারের ক্ষেত্রে নতুন নতুন মাশুল ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৫০ টাকা, আগে যা ছিল ৪ হাজার ৮০০ টাকা।
২০ ফুট দৈর্ঘ্যের রফতানি খালি কনটেইনারের গ্রাউন্ড রেন্ট বাড়িয়ে করা হয়েছে দৈনিক ১১২ ও ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনারের জন্য ২২৪ টাকা। আগে এ হার ছিল ২০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে ১০০ ও ৪০ ফুটের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা। প্রতি টনে ল্যান্ডিং চার্জ ১৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার (বিপ্লব) বণিক বার্তাকে বলেন, আজ (গতকাল) থেকে নতুন ট্যারিফ অনুযায়ী বিল করা হচ্ছে।
বিকডা-সংশ্লিষ্টদের দাবি, অনেক আগেই চার্জ বৃদ্ধির কথা ছিল। গত বছরের এপ্রিলে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন চার্জ নির্ধারণের নির্দেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে বৃদ্ধিও করেছিলাম, যা পরে সরকারের অনুরোধে বন্ধ করা হয়। বৃদ্ধির প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হার নির্ধারণ করা হয়েছে। আমদানি-রফতানিকারকদের এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদিও রফতানিকারকদের দাবি, প্রতিযোগিতার সক্ষমতা দুর্বল হবে।
গত ৩১ ডিসেম্বর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। প্রাইভেট আইসিডি/অফডক কর্তৃক রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনারের বিপরীতে বিভিন্ন চার্জ বর্ধিত হারে আদায় বন্ধ করা প্রসঙ্গে ওই চিঠিটি পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর। চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সভাপতি এবং বিকেএমইএ সভাপতিকে।
বিজিএমইএর দাবি, প্রাইভেট আইসিডি/অফডকগুলো বর্তমানে সম্পূর্ণ একতরফাভাবে রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনারের ওপর বিভিন্ন চার্জ ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২২ শতাংশ বর্ধিত হারে আদায় করবে মর্মে বিভিন্ন শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের চিঠি পাঠিয়েছে। আকস্মিকভাবে এ ধরনের চার্জ বৃদ্ধির ফলে দেশের সর্ববৃহৎ রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি কার্যক্রমে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া প্রাইভেট আইসিডি কর্তৃক একতরফাভাবে চার্জ বৃদ্ধি করা যাবে না মর্মে সিদ্ধান্ত রয়েছে—এমন তথ্য উল্লেখ করে নৌ-পরিবহন সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, বর্তমানে দেশের পোশাক শিল্প চরম সংকটপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্প বাজারে সিএম (কাটিং-মেকিং চার্জ) কমে যাওয়া, বিদেশী ক্রেতাদের নিত্যনতুন শর্তারোপ ও অভ্যন্তরীণ বহুবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে এমনিতে শিল্পে ক্রান্তিকাল চলছে।
রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনারের প্রাইভেট আইসিডি কর্তৃক বর্ধিত চার্জ আদায় করা হলে তৈরি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগী দেশের তুলনায় রফতানি সক্ষমতা হারাবে চিঠিতে এ দাবি জানিয়ে বলা হয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া প্রাইভেট আইসিডিগুলো যাতে রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনারের বিপরীতে বর্ধিত চার্জ আরোপ করতে না পারে, সে বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে আইসিডি/অফডকগুলোকে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করছি।
বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কোনো আলোচনা ছাড়াই আইসিডি চার্জ বৃদ্ধি করা হয়েছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বেসরকারি আইসিডি/সিএফএস নীতিমালা-২০১৬ অনুযায়ী ট্যারিফ নির্ধারণের লক্ষ্যে গত ২১ এপ্রিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ মুহূর্তে একতরফাভাবে বর্ধিত চার্জ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপন্থী। ২০১৬ সালের আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী আইসিডির মাশুল নির্ধারণের দায়িত্ব ট্যারিফ কমিটির।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই হ্যান্ডলিং হয় প্রাইভেট আইসিডির মাধ্যমে। রফতানিকারকরা ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানে পণ্য বন্দরের আশপাশে গড়ে ওঠা আইসিডিগুলোয় এনে বোঝাই করেন। সেখান থেকে রফতানি কনটেইনার বন্দরে নিয়ে জাহাজে তোলা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়, যার জন্য রফতানিকারকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে মাশুল নিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট আইসিডি। অন্যদিকে আমদানি পণ্যের ২১ শতাংশ বন্দর থেকে আইসিডিতে নেয়া হয়। শুল্কায়ন শেষে সেগুলো নিয়ে যান আমদানিকারকরা। এছাড়া আইসিডিগুলো খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ এবং পরিবহন করে থাকে।