Home Apparel বন্ধের শঙ্কায় চট্টগ্রামের ১৫ পোশাক কারখানা

বন্ধের শঙ্কায় চট্টগ্রামের ১৫ পোশাক কারখানা

পোশাক খাতের কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও শ্রমনিরাপত্তা মূল্যায়নে কারখানা সংস্কারে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। পরবর্তী সময়ে এসব কারখানা ও বিভিন্ন সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিকবার সংস্কারের সময় বৃদ্ধি করে কর্তৃপক্ষ। তবে চলতি বছরের জুনের পর নতুন করে কারখানাগুলোকে আর সময় দিতে আগ্রহী নয় কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। অন্যদিকে এ বর্ধিত সময়ের মধ্যে অনেক কারখানা সংস্কার সম্পন্ন করতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর্থিক ও প্রয়োজনীয় অন্য সহযোগিতা না পেলে অন্তত ১৫ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কর্মপরিবেশ ও শ্রম নিরাপত্তা মূল্যায়নে কারখানা সংস্কারে বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত ১৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রামের কারখানার সংখ্যা ৫০টির বেশি। এখন পর্যন্ত কিছু কারখানা সংস্কার সম্পন্ন করতে সমর্থ হলেও বেশির ভাগের পক্ষেই এখনো তা সম্ভব হয়নি। এমনকি অনেক কারখানা সংস্কার না করতে পেরে বন্ধ হয়ে গেছে।

চট্টগ্রামের পোশাক খাতের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বিজিএমইএর প্রস্তুতকৃত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ৬৮৬টি পোশাক কারখানার মধ্যে ২০১৮ সালে চালু ছিল ৩৬৪টি। তবে চালু থাকা এসব কারখানার সংখ্যা চলতি বছর কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৮-এ। এর মধ্যে বর্তমানে সরাসরি রফতানি কার্যক্রমে আছে ১৮৬টি কারখানা। অর্থাৎ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে ৩৬টি পোশাক কারখানা। পাশাপাশি সরাসরি রফতানি কার্যক্রমে জড়িত কারখানার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পোশাক কারখানা মালিক ও খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্ধের শঙ্কায় আছে কমপক্ষে ১৫ পোশাক কারখানা।

চট্টগ্রাম কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. আল-আমীন বণিক বার্তাকে জানান,     নিয়মানুযায়ী স্থাপন না করা চট্টগ্রামের কতগুলো পোশাক কারখানার একটি তালিকা গত বছর আমাদের হাতে আসে। সেগুলো ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার করার কথা ছিল। কারখানাগুলো সংস্কার করতে না পারায় অনেকবার সময় বাড়ানো হয়। ২০২০ সালের জুনে কারখানা সংস্কারে এ বর্ধিত সময় শেষ হওয়ার কথা। সময় আর নতুন করে বাড়ানো হবে কিনা এমন সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রকৌশলী মো. মঈন জানান, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বিভিন্ন শর্তের কারণে কারখানাগুলোকে সংস্কার করার কথা বলা হয়। অ্যালায়েন্সের বেঁধে দেয়া সময় শেষ হয়েছে। তবে অ্যাকর্ডের সময় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত আছে। অ্যাকর্ডের সময় শেষ হলে তখন এ কাজের তদারক করবে আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিল (আরএসটি)। তখন ব্র্যান্ড কোম্পানি, শ্রমিক সংগঠন ও বিজিএমইএর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত দল এ বিষয়গুলো মনিটরিং করবে।

কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরের তালিকায় থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের কারখানায় সংস্কার শুরু করা হলেও এখনো কাজ শেষ করা যায়নি। এজন্য শেয়ারিং কারখানা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। তবে নতুন করে জায়গা কিনে কারখানা আবার চালুর বিষয়ে আলোচনা করছি। তবে পেরে উঠব কিনা সে বিষয় নিশ্চিত নই। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিপদে আছি। অন্য কারখানাগুলোর অবস্থাও একই। এ বিষয়ে বিজিএমইএ বিশেষ ভূমিকা না নিলে আমাদের মতো ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয় যাবে।

এদিকে সংস্কার করতে হবে এমন কোম্পানির তালিকায় থাকা একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, তালিকায় চট্টগ্রামের যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছে কল-কারখানা পরিদপ্তর, তার মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চালু আছে, তার মধ্যে ৩০-৩৫টি প্রতিষ্ঠানের ইউডি চালু আছে, বাকিগুলো বন্ধ আছে। তাছাড়া রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনস বিপর্যয়ের পর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে চট্টগ্রামে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন শিল্পপল্লী এ অঞ্চলে গড়ে না ওঠায় অনেকে শহরের বাইরে জমি কিনে প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। সেখানে এ ধরনের চিঠি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের বিরূপ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে। সেজন্য ছোট ব্যবসায়ীরা এ বাজারে টিকে থাকতে পারবেন না। ছোট কারখানার ব্যাপারে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিএমইএর পরিচালক বণিক বার্তাকে জানান, পোশাক খাতের সূচনা হওয়া এ চট্টগ্রামেই সবচেয়ে বেশি কারখানা একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। কারণ শুরু থেকেই শেয়ারিং করে এখানে কারখানাগুলো চালু ছিল। সংস্কারে ভবন মালিকগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় ফায়ার সেফটিসহ অন্যান্য কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চট্টগ্রামের কারখানা বেশি বন্ধ হচ্ছে। তাছাড়া দু-একজন শহরের বাইরে জায়গা কিনে নতুন করে কারখানা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও সবার পক্ষে সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here