আন্তর্জাতিক বাজারে ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য রফতানি করেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। যার ৮৪ শতাংশই পোশাক পণ্য। আবার মোট পোশাক রফতানির ৭৩ শতাংশই পাঁচটি পণ্যে সীমাবদ্ধ। পণ্য রফতানির এ কেন্দ্রীভবন দূর করতে সরকারের পাশাপাশি উদ্যোগী হয়েছে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি রফতানি খাতগুলোও। এ ধারাবাহিকতায় পোশাক পণ্যের রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে ৩১টি পণ্য চিহ্নিত করা হয়েছে। পণ্যগুলোর বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারের আকার ১৩২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। পোশাক শিল্প মালিকদের সংশ্লিষ্ট সংগঠন বিজিএমইএ সম্প্রতি পোশাক পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে মনোনিবেশ করেছে। যার ধারাবাহিকতায় ‘ইম্পর্ট্যান্স অব প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন’ শীর্ষক গবেষণা দাঁড় করিয়েছে সংগঠনটি। গবেষণার পর ৩১টি পণ্য ঘিরে পাঁচ বছর মেয়াদি অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে কটনভিত্তিক ১৭টি ও নন-কটনভিত্তিক ১৪টি পণ্য।
বিজিএমইএ চিহ্নিত ৩১ পণ্যের বর্তমান আন্তর্জাতিক আমদানি বাজার ১৩ হাজার ২২১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি হয় মাত্র ৭১৬ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। এ হিসাবে ৩১ পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, টি-শার্ট, ট্রাউজার, জ্যাকেট, সোয়েটার ও শার্টস—পোশাক রফতানি আয়ের ৭৩ শতাংশই আসে এ পাঁচ পণ্য থেকে। অতি কেন্দ্রীভবন আছে পোশাক পণ্যের কাঁচামালেও। ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ পণ্যই কটনভিত্তিক। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান সক্ষমতা ব্যবহার করে ৩১ পণ্যের দিকে মনোনিবেশ করে কেন্দ্রীভবন কাটানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। চিহ্নিত এ পণ্যগুলো তৈরিতে কারখানাগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধিও সম্ভব হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, পণ্য ও বাজার দুই ক্ষেত্রে কনসেন্ট্রেশন রয়েছে। গবেষণা বলছে, কারখানাগুলোর বিদ্যমান সক্ষমতা ব্যবহার করেই পণ্যের কনসেন্ট্রেশন দূর করা সম্ভব। এ কাজটি সহজ করতেই ৩১টি পণ্য অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে আগামী পাঁচ বছরের জন্য। এছাড়া আগামী ১০ বছরের জন্য অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে ২০টি পণ্য। বিজিএমইএর তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ১২৩ কোটি ডলারের রফতানি হয় ১০ বছরের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ২০ পণ্য। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যগুলোর বর্তমান আমদানির পরিমাণ ৫ হাজার ৩৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের। এ হিসাবে ১০ বছরের জন্য চিহ্নিত ২০ পণ্যের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের ধরন আছে সহস্রাধিক। সেখানে স্বল্প মূল্যের টি-শার্ট যেমন আছে, তেমনি রয়েছে উচ্চমূল্যের ওভার কোট, ডেনিম জ্যাকেট ও স্যুট। প্রায় ১ লাখ কোটি ডলারের এ বাজারের মাত্র ৫-৬ শতাংশ পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। এটিও আবার গুটিকয়েক পণ্যনির্ভর। এক দশক ধরে দেশের প্রধান রফতানি পণ্য টি-শার্ট। পোশাক খাতে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের অর্ধেকই আসে টি-শার্ট ও ট্রাউজার থেকে।
গত চার দশকে এ শিল্পটি ধীরে ধীরে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ চালিকাশক্তির ভিত মূলত পাঁচ-ছয়টি পণ্য। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে সাধারণত দুই ক্যাটাগরিতে পোশাক রফতানি হয়। একটি হলো নিট, অন্যটি ওভেন। এ দুই ক্যাটাগরিতে মূলত পাঁচ ধরনের পণ্য রফতানি হয়। এগুলো হলো টি-শার্ট, ট্রাউজার, শার্ট, জ্যাকেট ও সোয়েটার। তৈরি পোশাক খাতে মোট রফতানির ৮০ শতাংশের বেশি দখল করে রেখেছে এ পাঁচ পণ্য।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের রফতানি খাতে বহুমুখিতার ঘাটতি অনেক দিন ধরেই। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। তবে রাতারাতি তা সম্ভব নয়। কারণ পোশাকের বৈশ্বিক বাজার বিবেচনা করলে মৌলিক পণ্যের চাহিদা সবসময়ই আছে এবং থাকবে। অর্থনৈতিক মন্দায়ও এ ধরনের পণ্যের চাহিদা কমে না।