Home Apparel দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ হয় অধিকাংশ কারখানায়!

দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ হয় অধিকাংশ কারখানায়!

শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করাচ্ছে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। কোনো কোনো কারখানায় দিনে ১৩ ঘণ্টার বেশিও কাজ করানো হয়। অবশ্য বাড়তি আয়ের জন্য ওভারটাইমকে ইতিবাচক মনে করেন ৪৭ শতাংশ শ্রমিক। যদিও বিষয়টি নিয়ে ৫৩ শতাংশের শ্রমিকের মনোভাব নেতিবাচক।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। আইএলওর পক্ষে সমীক্ষার কাজটি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসে তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকেরা। গত মাসে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে আইএলও।

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ১১১ পোশাক কারখানার ২ হাজার ১৮৪ শ্রমিক, ১১১ সুপারভাইজার ও ১১১ ব্যবস্থাপক এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। সানেমের গবেষকেরা ভিন্ন ভিন্ন দিন তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের সময় শ্রমিকসহ অন্যদের কাছে আগের দিন কত ঘণ্টা কাজ করেছেন, তা জানতে চান গবেষকেরা। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দিনে ১৩ ঘণ্টার বেশি কাজ হয়েছে ২১ কারখানায়। ১২ ঘণ্টার বেশি, তবে ১৩ ঘণ্টার কম কাজ করেছে ৫টি কারখানার শ্রমিক। ১৯ কারখানায় কাজ হয়েছে ১১ ঘণ্টার বেশি, ১২ ঘণ্টার কম। ৫১ কারখানার শ্রমিকেরা কাজ করেছেন ১০ ঘণ্টার বেশি, তবে ১১ ঘণ্টার কম। অথচ শ্রম আইন অনুযায়ী দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা। আর ওভারটাইম সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা। সেটি মেনেছে মাত্র ১৫টি কারখানা। ৯-১০ ঘণ্টা কাজ করেছে ৪টি কারখানার শ্রমিক। ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা কাজ হয়েছে মাত্র ১১ কারখানায়।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ৯৭ দশমিক ৩ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের ওভারটাইম করানো হয়। আর ৪৫ শতাংশ শ্রমিক সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। তবে অতিরিক্ত ওভারটাইম করলেও সেটিকে ইতিবাচক মনে করেন ৪৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ শ্রমিক। ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিকের মনোভাব অবশ্য ভিন্ন। অতিরিক্ত ওভারটাইমের বিপক্ষে তাঁদের অবস্থান।

শ্রমিকের ওভারটাইমের পাশাপাশি সমীক্ষাটিতে পোশাক কারখানায় কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকের অনুপাত, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্বাস্থ্য, ছুটি, মজুরি, কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা, নতুন পণ্য উদ্ভাবনে কারখানার বিনিয়োগসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দাবি করে আসছিল, পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকের মধ্যে ৮০ শতাংশ নারী। তবে নারী শ্রমিকের সংখ্যাটি কমছে—দু-তিন বছর ধরে বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। আইএলওর সমীক্ষায় সেটি আবার উঠে এল। সেখানে বলা হয়েছে, মোট শ্রমিকের ৬১ দশমিক ১৭ শতাংশ নারী ও ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ পুরুষ। নারীদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ বিবাহিত, আড়াই শতাংশ বিধবা এবং ৩ শতাংশের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।

সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, পোশাকশিল্পে কর্মরত ৯৪ শতাংশ শ্রমিকের বয়স ১৮-৩৫ বছর। ৮৬ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৩০ বছর। ১ দশমিক ২৮ শতাংশ শ্রমিকের বয়স ১৮ বছরের নিচে। কর্মরত শ্রমিকের মাত্র ১ দশমিক ২৪ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের বেশি। সেখানে পুরুষদের আধিপত্য বেশি। তার মানে ৩৫ বছরের পরে কাজ করতে পারছেন না অধিকাংশ নারী শ্রমিক।

পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকের ১৫ শতাংশ প্রাথমিক পাস করেননি। তাঁদের মধ্যে দশমিক ৯৬ শতাংশের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবে ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ শ্রমিক এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা পাস করেছেন। ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ এইচএসসি পাস। ডিগ্রি পাস করেছেন ১ দশমিক ২৫ শতাংশ শ্রমিক। সুপারভাইজারদের মধ্যে ৩৪ শতাংশই এসএসসি পাস। আর সাড়ে ২২ শতাংশ এইচএসসি পাস।

অধিকাংশ কারখানায় ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ হচ্ছে, এমন তথ্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। গতকাল রাতে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিপমেন্টের জন্য কোনো কোনো কারখানায় এক-দুই ঘণ্টা ওভারটাইম করানো হয়। তবে সেটি নিয়মিত হয় না। সাধারণত কারখানায় মাসে ৫২ ঘণ্টা ওভারটাইম করানো হয়। অবশ্য কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৬০ থেকে ৭০ ঘণ্টা পর্যন্ত ওভারটাইমের অনুমোদন দিয়ে থাকে। তারপরও অধিকাংশ কারখানায় ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করানোর তথ্য আমি মানতে পারলাম না।’

অবশ্য শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার বলেন, মাঝারি ও বড় কারখানায় কাজের চাপ বেশি থাকে। সেখানে মাঝেমধ্যেই ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো হয়। কাটিং ও সুইং সেকশনে ১০ ঘণ্টা কাজ হলে ফিনিশিং সেকশনে ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো হয়। মজুরি কম হওয়ার কারণে শ্রমিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওভারটাইম করে থাকেন। অবশ্য দিনের বড় একটা সময় কাজ করার কারণে ৩৫-৪০ বছর বয়সের মধ্যেই তাঁরা শিল্পের জন্য অকেজো হয়ে যাচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here