পোশাক খাতের কারখানায় কর্মপরিবেশ ও শ্রমনিরাপত্তা ব্যবস্থা মূল্যায়নে গঠিত ইউরোপীয় ক্রেতা ও শ্রম অধিকার সংস্থার জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি বা অ্যাকর্ড। জোটের আওতাভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬৭৪টি। অ্যাকর্ড প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মোট কারখানার মধ্যে মাত্র ২৭৩টি বা ১৬ শতাংশ প্রাথমিক পরিদর্শনে চিহ্নিত ত্রুটির সংশোধন শতভাগ সম্পন্ন করেছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত সেফটি রেমিডিয়েশন প্রোগ্রেস বা নিরাপত্তা সংশোধন অগ্রগতির তথ্যে অ্যাকর্ড বলছে, জোটের আওতাভুক্ত কারখানায় প্রাথমিক সংশোধন অগ্রগতির হার ৯১ শতাংশ। ২৭৩টি কারখানা প্রাথমিক সংশোধনের কাজ সম্পন্ন করেছে। ১ হাজার ১৭৩টি কারখানার প্রাথমিক সংশোধনের হার ৯০ শতাংশের বেশি। কারখানার ত্রুটি সংশোধনে অগ্রগতি নেই, এমন ১৬৭টি কারখানার সঙ্গে ক্রেতার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন ঘোষণা করেছে অ্যাকর্ড।
অ্যাকর্ডের তথ্যমতে, অগ্নিসংক্রান্ত অভিন্ন সংশোধনমূলক বিষয়ের মধ্যে আছে কলাপসিবল গেট অপসারণ, ফায়ার এক্সিটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, আগুন চিহ্নিত করার যন্ত্র ও অ্যালার্ম ব্যবস্থা স্থাপন এবং অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন। কলাপসিবল গেট অপসারণ হয়েছে ৯৮ শতাংশ কারখানায়, ৯৪ শতাংশ কারখানায় ফায়ার এক্সিটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা আছে, আগুন চিহ্নিত করার যন্ত্র ও অ্যালার্ম ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে ৫৫ শতাংশ কারখানায় এবং অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন হয়েছে ৪৬ শতাংশ কারখানায়।
প্রাথমিক পরিদর্শনে চিহ্নিত অগ্নিসংক্রান্ত বিষয় ছিল ৩৪ হাজার ৩৭৯টি। যার ৮০ শতাংশ সংশোধন হয়েছে। বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত ৩৫ হাজার ১২৬টি। যার ৯১ শতাংশ সংশোধন হয়েছে। স্থাপত্যসংক্রান্ত চিহ্নিত বিষয় ছিল ১৯ হাজার ৯৫১টি, যার ৮২ শতাংশ সংশোধন হয়েছে। প্রাথমিকের পর ফলোআপ পরিদর্শনে অগ্নিসংক্রান্ত বিষয় চিহ্নিত হয় ১৩ হাজার ৫৯টি। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশ সংশোধন হয়েছে। বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত বিষয় চিহ্নিত হয় ৪১ হাজার ১১৯টি, যার মধ্যে সংশোধন হয়েছে ৭৫ শতাংশ। স্থাপত্যসংক্রান্ত চিহ্নিত ১ হাজার ৯৫০টির মধ্যে সংশোধন হয়েছে ৬৬ শতাংশ।
অ্যাকর্ডে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত অভিযোগেরও হালনাগাদ দিয়েছে অ্যাকর্ড। সেখানে দেখা যায় ২০১৪ সালে অ্যাকর্ডের কাছে অভিযোগ ছিল ১১টি। ২০১৫ সালে এটি বেড়ে হয় ৫০। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮-তে অভিযোগ আসে যথাক্রমে ৯১, ৩৩৮ ও ৬৬৩টি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে অ্যাকর্ড অভিযোগ পেয়েছে ৭৪৯টি। মোট ১ হাজার ৯০০ অভিযোগের মধ্যে নিরাপত্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৫২টি। নিরাপত্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি চলমান আছে ১৫৬টির। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ছাড়া অভিযোগ এসেছে ৬৬৪টি।
পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশ ও শ্রমনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ব্যবস্থায় দুর্বলতার চরম প্রকাশ ঘটে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। ওই দুর্বলতার সুযোগ নেয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি পোশাকের ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংস্থার সমন্বয়ে গঠন হয় একাধিক জোট। এর একটি হলো ইউরোপভিত্তিক জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড)। সম্প্রতি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শর্তসাপেক্ষে এ জোটটি নিরীক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে পোশাক কারখানার মূল্যায়ন কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে। কিন্তু চলমান মূল্যায়ন কাজ অব্যাহত রাখতে কিছু শর্ত জুড়ে দেয় জোটটি।
জানা গেছে, অ্যাকর্ডের পূর্বঘোষিত মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। কিন্তু কারখানার সংস্কার অনগ্রসরতা গতি ও শ্রম অধিকার নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়েই মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ঘোষণা করে অ্যাকর্ড। এদিকে কারখানার মূল্যায়ন কার্যক্রম ও সংস্কারের বিষয় নিয়েই বিক্ষুব্ধ কারখানা কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। গত বছর মে মাসে আদালতের পক্ষ থেকে অ্যাকর্ড ২৮১ দিন সময় পায়। এরপর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ‘আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল’ (আরএসসি) প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয় অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএর।
সম্প্রতি এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, কার্যকর ফলাফলের কারণে এরই মধ্যে অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে নেয়া নথিবদ্ধ সিদ্ধান্ত, নীতি ও প্রটোকল আরএসসি অব্যাহত রাখবে। অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে। অ্যাকর্ডের বিদ্যমান সংশোধনমূলক পরিকল্পনা অনুযায়ী কারখানার মূল্যায়ন কর্মসূচি আরএসসির আওতায় অব্যাহত রাখা হবে। ঢাকায় অ্যাকর্ডের সব কার্যক্রম, কর্মী, অবকাঠামো আরএসসিতে স্থানান্তর করা হবে। আরএসসিতে স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও অ্যাকর্ডের রিপোর্টিং পদ্ধতি অনুসরণ করে চিফ সেফটি ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেয়া হবে। অ্যাকর্ডে প্রচলিত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক অভিযোগ পদ্ধতি আরএসসিতে অনুসরণ করা হবে।