Home Apparel রপ্তানি আয়ে ফের ধাক্কা

রপ্তানি আয়ে ফের ধাক্কা

রপ্তানি বাণিজ্য ফের ধাক্কা খেয়েছে। টানা চার মাস কমার পর গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৩  শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

কিন্তু নতুন বছরের প্রথম মাসে ফের সেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ফিরে গেছে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ২৯২ কোটি ডলারের (২২.৯২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১৩ শতাংশ। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ৩৬৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪২১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২ হাজার ৪১৮কোটি (২৪.১৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ‘র সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানিতে সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। জানুয়ারিতে ফের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। “এরমধ্যে চায়নার করোনাভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্বে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত এই আতঙ্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার বিষয়। “যদি এই রোগ চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে আমাদের রপ্তানিতে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। “এই অবস্থায় কোনো দেশই অন্তত কিছুদিন চীন থেকে তৈরি পোশাক পণ্য কিনবে না। সেক্ষেত্রে চীনের অনেক অর্ডার বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। আমাদের রপ্তানিতে যে ধাক্কা লেগেছে, তা কেটে যেতে পারে।” “করোনাভাইরাসের কারণে মেইনল্যান্ড চায়নায় বড় বড় কোম্পানিগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হয়ে আছে। ফলে তাদের বিক্রিতে ভাটা পড়তে পারে, চীনের অভ্যন্তরে উৎপাদনও কমে যেতে পারে। “এই পরিস্থিতিতে চীনের কিছু তাৎক্ষণিক কার্যাদেশ (অর্ডার) ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশেও স্থানান্তরিত হয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো হলে কিছু অর্ডার বাংলাদেশেও চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা লাভবান হব। আমাদের রপ্তানিতে যে মন্দা চলছে তা কেটে যাবে।” “তবে এই রোগ যদি অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমরাসহ গোটা বিশ্বের রপ্তানি বাণিজ্যই বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়বে।” সুখবর নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরু হলেও দ্বিতীয় মাস অগাস্টে এসেই ধাক্কা খায় রপ্তানি আয়। প্রথম মাস জুলাইয়ে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। কিন্তু অগাস্ট মাসে গত বছরের অগাস্টের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ আয় কম আসে। সেপ্টেম্বরে কমে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। অক্টোবরে আরও বড় ধাক্কা খায়: এ মাসে কমে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। নভেম্বরে কমে প্রায় ১১ শতাংশ।

পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬.২১%               

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। এই সাত মাসে নিট পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর উভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৯৬২ কোটি ডলার। আর উভেন থেকে এসেছে ৯৪৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। হিসাব করে দেখা গেছে, এই ছয় মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। কৃষি ফণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১১ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ। এই সাত মাসে শাক-সবজি রপ্তানি বেড়েছে ১০৫ শতাংশ। হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে তামাক রপ্তানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here