করোনা ভাইরাস এখন বিশ্বের বড় আতঙ্কের নাম। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান থেকে এর সংক্রমণ শুরু হলেও এরইমধ্যে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার প্রায় ৮৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণ, পর্যটন সবক্ষেত্রেই। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন, এবার করোনা ভাইরাসের প্রভাব ২০০৮ সালে শুরু হওয়া বিশ্বমন্দাকেও হার মানাতে পারে। এরইমধ্যে বিশ্বব্যাপী শেয়াবাজারের ব্যাপক দরপতন দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশেও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর শিল্পোদ্যোক্তারা বেকায়দায় আছেন। করোনা ভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হলে কাঁচামালের অভাবে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে দেশের পোশাক শিল্প খাতের কাঁচামাল চীন থেকেই আমদানি করা হয় সবচেয়ে বেশি।
তবে দেশের ডায়িং সেক্টরে এর প্রভাব এখনও খুব বেশি মাত্রায় পড়েনি। ব্যবসায়ীরা চায়না হলিডের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আগেই আমদানি করে রেখেছিলেন। তাছাড়া কিছু মালামাল প্রস্তুত আছে, ফ্যাক্টরি খোলার সঙ্গে সঙ্গেই জাহাজীকরণ সম্ভব হবে।
অন্যদিকে আপৎকালীন সংকটের বিকল্প হিসেবে কাঁচামাল আমদানির বিকল্প উৎস্যও খুঁজে বের করার চেষ্টায় আছেন দেশের ডায়িং খাতের ব্যবসায়ীরা। চীনের বিকল্প হিসেবে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া ও নেপালকে বিবেচনায় নিয়েছেন তারা।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, করোনার প্রভাবে গত সপ্তাহেই বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। কমে গেছে জ্বালানি তেলের দাম (৪৬.১৯ইউএসডি/ব্যারেল), যা গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
করোনা ভাইরাসের প্রভাব ধীরে ধীরে কমে আসার বদলে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী তা মহামারির রূপ নিয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হাজার চেষ্টা করেও একে থামাতে পারছেন না। এ পর্যন্ত ৩২৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে চীনেই মারা গেছে ৩০১২ জন।
চীন থেকে পণ্য আমদানি ব্যাহত হওয়ায় দেশের বাজারে থাকা পোশাক শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। এককভাবে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৭৯ কোটি মার্কিন ডলার। দেশের বিভিন্ন ব্যবসা ও বাণিজ্য সংগঠন তাদের আসন্ন ক্ষয়ক্ষতির জন্য তীব্র আশংকা প্রকাশ করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডায়িড ইয়ার্ন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সালাউদ্দিন আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে করোনা ভাইরাস বর্তমান বিশ্বে এক জরুরি সমস্যা, যদিও বাংলাদেশের ডায়িং সেক্টরে প্রভাব কিছুটা কম। এর কারণ ডায়িং ফ্যাক্টরিগুলোর কাঁচামাল আমদানি একটি চলমান প্রক্রিয়া। চায়না হলিডের বিষয়টি মাথায় রেখে চাহিদা অনুযায়ী কিছু কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী এনেছেন ব্যবসায়ীরা। আবার কিছু মালামাল প্রস্তুতো আছে, তাদের ফ্যাক্টরি খোলার সঙ্গে সঙ্গেই জাহাজীকরণ সম্ভব হবে।’
সালাউদ্দিন আলমগীর বলেন, ‘আশা করি আমরা কাঁচামাল আমদানির বিকল্প উৎসও খুঁজে পাবো। এরইমধ্যে আমরা ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া ও নেপালকে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছি। এর ফলে ডায়িড ইয়ার্নের মূল্য পাউন্ড প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়লেও মূল প্রভাবটা পড়বে তৈরি পোশাক শিল্পে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চীন থেকে বছরে গার্মেন্টসের কাঁচামাল আমদানি করে ৫০২ কোটি মার্কিন ডলারের; যার মধ্যে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজের সরবরাহ থাকে ৪০ শতাংশের। কিন্তু বর্তমানে তাদের এই সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বেশ কিছু কাঁচামাল ও এক্সেসরিজের দাম বেড়ে গেছে। ফলে অনেক উদ্যোক্তা তাদের এলসিকৃত পণ্য উৎপাদনে হিমসিম খাচ্ছেন এবং যথাসময়ে তারা উৎপাদিত পণ্য ডেলিভারি দিতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। যাইহোক, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চীনের পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না হলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীগণ বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।’