নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল চীন থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এরই মধ্যে ধুঁকছে শ্রীলংকার তৈরি পোশাক খাত। তার ওপর ইউরোপে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় এ খাতে সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে ইতালিসহ ইউরোপের বেশক’টি দেশে কভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবে উদ্যম হারিয়ে ফেলেছেন অঞ্চলটির ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা। ফলে সার্বিকভাবে কমে গেছে শ্রীলংকার তৈরি পোশাকের রফতানি আদেশ। খবর ইকোনমি নেক্সট।
শ্রীলংকার অ্যাপারেলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রেহান লাখানি বলেন, আমাদের তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। এ খাতে নতুন সংকট হলো, যেসব বাজারে আমরা পোশাক রফতানি করি, সেগুলো নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত। ইতালিতে এরই মধ্যে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। একইভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে জার্মানিতেও। ফলে এসব বাজারে আমাদের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাচ্ছে কিংবা হ্রাস পাচ্ছে। কিছু কিছু ম্যানুফ্যাকচারার আশঙ্কা করছে, সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া আগামী মৌসুম থেকে তাদের ক্রয়াদশে ২০-৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে। বিষয়টি আমাদের পোশাক রফতানিকারকদের জন্য বেশ ভীতিকর।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর শ্রীলংকার তৈরি পোশাকের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি বাজার ইতালি। ২০১৮ সালে ইউরোপের দেশটিতে শ্রীলংকা থেকে পোশাক রফতানি হয়েছিল ৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার সমমূল্যের। একই সময়ে যুক্তরাজ্যে রফতানি হয়েছিল ৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পোশাক। ওই বছর পুরো ইউরোপে শ্রীলংকা থেকে পোশাক রফতানি হয় ২০০ কোটি ডলারের।
লাখানি বলেন, ইউরোপে যে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে, তা আমরা আশা করিনি। বর্তমানে আমাদের পোশাক খাতের জন্য এটি সব চেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। কারণ সংক্রমণ ভয়ের কারণে ক্রেতারা ঘর থেকে অতি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। তারা পোশাক কিনতে দোকানে খুব একটা যাচ্ছেন না। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রীলংকার পোশাক খাতের সংকট দ্বিগুণ হয়ে দেখা দিয়েছে। একদিকে পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে ক্রয়াদেশ।
বর্তমানে শ্রীলংকার শীর্ষ রফতানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক। ২০১৯ সালে মোট ১ হাজার ১৯০ কোটি ডলার বৈদেশিক আয়ের মধ্যে সাড়ে পাঁচশ কোটি ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে। এছাড়া শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপাত্ত থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির মাধ্যমে আয় হয়েছিল ২২০ কোটি ডলার। কিন্তু এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেও নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত মারা গেছে অন্তত ছয়জন। অন্যদিকে ইতালিতে ক্রমে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ভাইরাসটির সংক্রমণের বিস্তার ঘটছে শ্রীলংকার তৈরি পোশাকের চতুর্থ বৃহত্তম ক্রেতা জার্মানিতেও। এ অবস্থায় বৈশ্বিক বাজারগুলোয় শ্রীলংকার পোশাক রফতানি বহুলাংশে কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে চান্দ্র নববর্ষের পর থেকেই চীনে বহু কারখানা বন্ধ ছিল। ফলে এসব কারখানা থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় কাপড়সহ অন্য কাঁচামাল সরবরাহ। এ অবস্থায় শ্রীলংকার কারখানাগুলো আগের ক্রয়াদেশের পোশাক উৎপাদন করতেই হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে চীনের কারখানাগুলো ফের চালু হচ্ছে, কিন্তু সেখান থেকে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরো কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে মনে করছেন লাখানি।
তিনি বলেন, পোশাক খাতে কাঁচামালের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা আগামী মে-জুন পর্যন্ত চলবে। ফলে বেশকিছু কারখানা রয়েছে, যেগুলো দু-তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকেই বিকল্প হিসেবে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও কোরিয়া থেকে পলিয়েস্টার এনে কারখানা চালু রাখার চেষ্টা করলেও সবাই তা পারবে না।