চশমা ব্যবহারের পর ৬২ শতাংশ পোশাক শ্রমিক আগের তুলনায় সহজে সুচে সুতা লাগাতে পারছেন। ক্লিয়ার ভিশন ওয়ার্কপ্লেস (সিভিডব্লিউ) প্রোগ্রামের আওতায় চশমা পেয়ে কাজের গতি বেড়েছে এসব পোশাক শ্রমিকের। চোখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সাশ্রয়ী মূল্যে চশমা সরবরাহ করার মাধ্যমে কর্মীদের সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ভিশনস্প্রিংয়ের উদ্যোগে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ১৮ হাজারেরও বেশি পোশাক শ্রমিক চশমা পেয়েছেন। গতকাল কর্মী কল্যাণ ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ভিশনস্প্রিং আয়োজিত এক সভায় এ তথ্য দেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতিনিধি ছাড়াও অংশ নেন দেশ ও দেশের বাইরের শিল্প খাতের নীতিনির্ধারকরা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সুচে সুতা লাগানোর কাজ আগের তুলনায় সহজ হওয়ায় ৭৯ শতাংশ পোশাক শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে হতাশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এ অবস্থায় চোখের কোনো সমস্যা দেখা দিলে চশমা ব্যবহারের গুরুত্বারোপ করেন তারা। বক্তারা বলেন, ভিশনস্প্রিংয়ের উদ্যোগে সিভিডব্লিউ একটি সামাজিক উদ্যোগ। এ উদ্যোগের আওতায় বিশ্বব্যাপী ৬০ লাখের বেশি মানুষের চশমাকে সুলভ্য করা হয়েছে। সভায় ক্লিয়ার ভিশনকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবক হিসেবে উপস্থাপন করেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) মিশন ডিরেক্টর ডেরিক ব্রাউন। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চোখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটা ভালো একটি উদ্যোগ। এখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও পরিচালনা পর্ষদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে রিডিং গ্লাস ও চিকিৎসক কর্তৃক সুপারিশকৃত চশমা বিতরণ করা হয়ে থাকে। ভিশনস্প্রিং ও আরএমজি (তৈরি পোশাক খাত) সোর্সিং ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগী হতে পেরে ইউএসএআইডি গর্বিত। এ সময় তিনি সিভিডব্লিউ প্রোগ্রামকে বেসরকারি খাতে অবদান রাখতে এমন কর্মসূচির উত্কৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (জেনেভা) প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ভিশনস্প্রিংয়ের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর্মক্ষেত্রে চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রসংশনীয় ভূমিকা রাখছে। এটা পোশাক শ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বাড়িয়ে দেবে বলেও জানান তিনি। ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্বে ভিশনস্প্রিংয়ের সিইও এলা গুডউইন বলেন, বিশ্বের কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ শ্রমিকের চশমা ব্যবহার করা আবশ্যক। ঝাপসা চোখে সুচে সুতা লাগানো, ফ্যাব্রিকের ত্রুটি খোঁজা, তাঁত চালানো কিংবা চায়ের কুঁড়ি সংগ্রহ করার চিত্রটি একবার ভাবা যাক। এমন দৃশ্য সত্যিই বেদনাদায়ক। তবে সুসংবাদ হলো, ৭০০ বছরের পুরনো আবিষ্কার চশমা অস্পষ্ট দৃষ্টির সমাধান দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করে চলেছে। চোখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চশমা নিতে পারলে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতাও বাড়বে বলে ধারণা করেন তিনি। তিনি জানান, ইউএসএআইডি ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতায় ভিশনস্প্রিং সিভিডব্লিউ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কারখানা ও কৃষি খাতের শ্রমিকদের জন্য ভিশন স্ক্রিনিং দল গঠন করে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে চশমা নিশ্চিত করে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রোগ্রামটি চালু হওয়ার পর থেকে ১৬টি কারখানার প্রায় ৬৬ হাজার কর্মী সুবিধা গ্রহণ করেছেন। যাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ছিলেন নারী এবং ২৭ শতাংশেরই চশমা ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় তিনি ২০২২ সালের মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার কর্মীর চোখ স্ক্রিনিং করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।