নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো একের পর এক লকডাউন ঘোষণা করছে। বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করছে পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো। ফলে ভোক্তা চাহিদায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না ক্রেতারা। উল্টো এরই মধ্যে দেয়া ক্রয়াদেশগুলোর পরিমাণ কমাচ্ছেন বা চলমান ক্রয়াদেশগুলোর উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে বলছেন। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্যমতে ২০ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে।
করোনার প্রভাবে প্রথমে কাঁচামাল সরবরাহ সংকটে পড়তে হয়েছিল পোশাক খাতকে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চীননির্ভর কাঁচামাল আসতে পারছিল না। পরে ধীরগতিতে হলেও কাঁচামাল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেও কিন্তু এখন চাহিদা সংকটে পড়েছে পোশাক খাত। পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রেতারা অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় চাহিদা কমে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ দিচ্ছেন ক্রেতারা। এ প্রেক্ষাপটে বিরূপ পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে বিজিএমইএ।
গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, সর্বশেষ ৪ ঘণ্টায় বিজিএমইএর সদস্য ২০ প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। স্থগিত হয়েছে ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ। ভুক্তভোগী ২০ প্রতিষ্ঠানের কারখানাগুলোর মধ্যে আছে আমান গ্রাফিকস অ্যান্ড ডিজাইনস, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট, আমান নিটিং, খানটেক্স ফ্যাশনস লিমিটেড, মেহনাজ স্টাইলস অ্যান্ড ক্রাফট, বিটপি, ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপ, এসএফ ডেনিম, ভার্সেটাইল অ্যাটায়ার, অ্যামেজিং ফ্যাশনস, শাইনেস্ট অ্যাপারেলস, এপেক্স হোল্ডিংস, রুমানা ফ্যাশন, স্কাইলাইন গার্মেন্টস, ক্রসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ, নিট এশিয়া, তুর্কি ফ্যাশনস, কে গার্মেন্টস, সালেক টেক্সটাইল, আলটিমেট ফ্যাশন, ডেনিম এশিয়া, মোটেক্স এপিএস ও মোটেক্স ফ্যাশন।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক এ বিষয়ে বলেন, ক্রেতাদের বিবেক কোথায়? আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করার সময় তারা অন্য কিছু চিন্তা না করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অবহেলা হচ্ছে বলেন। কিন্তু এখন যখন এ রকম একটা বৈশ্বিক বিপর্যয় ঘটছে, এ সময়ে এসে তারা শুধু ব্যবসার কথা ভাববেন আর মানুষের কথা ভুলে যাবেন, এটা তো হয় না। তাদের আর আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। তাদের হলো মুনাফার আর আমাদের হচ্ছে বাঁচার বাস্তবতা। আমরা এখন কোথায় দাঁড়াব? আমাদের এত কর্মী, সামনে ঈদ আছে, বোনাস আছে।
এভাবে যদি কার্যাদেশ বাতিল হতে থাকে, তাহলে কী হবে? এমন প্রশ্ন তুলে রুবানা হক বলেন, ক্রেতারা যখন বলে আপনারা কাপড় কাটবেন না, তখন ওই কাপড়ের আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না। এ কাপড় কবে নেবে কিছুই জানি না আমরা। এসব কাপড়ের বিপরীতে ক্রয়াদেশ দেয়ার কথা এপিল-মে মাসে। কিন্তু ক্রেতারা এখন কোনোটাই প্লেস করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ভেবে দেখতে হবে। এদিকে তারা আমাদেরকে বলছেন পণ্য গুদামজাত করে রাখতে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এবার রফতানি অনেক কমে যাবে।
পোশাক রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমরা এখন মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি। ব্র্যান্ডগুলো ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছে এবং অব্যবহূত কাপড় ধরে রাখতে বলছে। যারা উৎপাদনে আছে বৈশ্বিক চাহিদা স্থবির হচ্ছে বলে তাদেরকে জাহাজীকরণ থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। যার প্রভাবে উৎপাদনমুখী ইউনিটগুলো আর্থিকভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
প্রসঙ্গত, দেশের তৈরি পোশাক খাতের ওভেন পণ্য তৈরির আনুমানিক শতকরা ৬০ শতাংশ কাপড় চীন থেকে আমদানি হয়। বর্তমানে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এদিকে নিট পণ্য তৈরির আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। নিট ও ডায়িংয়ের কেমিক্যাল এবং অ্যাকসেসরিজের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ আমদানি হয় চীন থেকে। ফলে ওভেন ও নিট দুই ধরনের পণ্য প্রস্তুতকারকরাই সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন।