করোনার প্রভাবে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো একের পর এক লকডাউন ঘোষণা করছে। বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করছে পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা চাহিদায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বাজার চাহিদার এ পরিস্থিতিতে নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না ক্রেতারা। এরই মধ্যে দেয়া ক্রয়াদেশগুলোর পরিমাণ কমাচ্ছেন। চলমান ক্রয়াদেশগুলোর উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে বলছেন। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) বলছে, প্রাপ্ত তথ্যমতে ৬৯ কারখানার প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে।
করোনার প্রভাবে প্রথমে কাঁচামাল সরবরাহ সংকটে পড়তে হয়েছিল পোশাক খাতকে। চীননির্ভর কাঁচামালগুলো আসতে পারছিল না। কারণ করোনার প্রভাবে দেশটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ধীরগতিতে হলেও কাঁচামাল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও এখন চাহিদা সংকটে পড়েছে পোশাক খাত। পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রেতারা একের পর এক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় ভোক্তা চাহিদা কমে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ দিচ্ছেন ক্রেতারা। বিরূপ পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে বিজিএমইএ।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে বিজিএমইএর সদস্য ৬৯ কারখানার ৯ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ২০৯ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে।
এর আগে ১৭ মার্চ বিকাল ৫টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে সর্বশেষ ৪ ঘণ্টায় বিজিএমইএর সদস্য ২০ প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। স্থগিত হয়েছে ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, একটা বৈশ্বিক বিপর্যয় ঘটছে। এ সময়ে এসে তারা (ক্রেতারা) শুধু তাদের ব্যবসার কথা ভাববেন আর মানুষের কথা ভুলে যাবেন, এটা তো হয় না। তাদের বাস্তবতা আর আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। তাদের ক্ষেত্রে এটি মুনাফার, আর আমাদের হলো বাঁচার বাস্তবতা। আমরা এখন কোথায় দাঁড়াব। আমাদের এত কর্মী, সামনে ঈদ আছে, বোনাস আছে।
এভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল হতে থাকলে সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রুবানা হক বলেন, ক্রেতারা যখন বলেন, আপনারা কাপড় কাটবেন না, ওই কাপড়ের তখন আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকল না। এ কাপড় কবে নেবেন, কিছুই জানি না আমরা। এসব কাপড়ের বিপরীতে ক্রয়াদেশ দেয়ার কথা এপ্রিল-মে মাসে। কিন্তু ক্রেতারা এখন কোনো ক্রয়াদেশ দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ভেবে দেখতে হবে। তারা ভাববেন তারা কী করবেন, এদিকে আমাদের বলছেন আমাদের ওয়্যারহাউজে রাখতে।