Home Recent এবার পাদুকা শিল্পের ঈদের বাজার মাটি

এবার পাদুকা শিল্পের ঈদের বাজার মাটি

অন্যান্য বছর পোশাকের পরই ঈদে জমজমাট থাকে পাদুকা বা জুতার বাজার। পছন্দসই জুতা না কিনলে ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ হয় না। ঈদ সামনে রেখে নতুন ডিজাইন ও বৈচিত্র্যের সমাহার নিয়ে আসে বাটাম অ্যাপেক্স, ওরিয়নসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড। নন-ব্র্যান্ড ও আমদানি করা জুতাও দেদার বিক্রি হয়। তবে এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। করোনা সতর্কতার কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটির মধ্যে বন্ধ আছে সব কারখানা। মজুদ জুতা নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছেন উদ্যোক্তারা। আর আগেই বন্ধ হয়েছে রপ্তানি। অনেক রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার এ শিল্পের ঈদের বাজার মাটি। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের বাজারে বেচাকেনা জমে ওঠে জুতা, লেডিস ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্টসহ চামড়াজাত পণ্যের। এসব পণ্যের কেনাবেচার পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার কোটি টাকা। চামড়াজাত পণ্যের মধ্যে জুতা বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারের বড় অংশ দখল করে আছে। সারা বছরে প্রায় ২০ কোটি জোড়া জুতা বিক্রি হয়। তবে ঈদের সময় এর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বা ছয় থেকে আট কোটি পাদুকা বিক্রি হয়ে থাকে। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, ঈদের বাজার খোলা থাকা নিয়েই শঙ্কা রয়েছে। এদিকে জুতা তৈরির কাঁচামাল বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কাঁচামাল ফিনিশড চামড়া উৎপাদনই বন্ধ রেখেছে ট্যানারিগুলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হঠাৎ করে তেমন উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। তবে অনেকে মনে করেন, আগে মজুদ থাকা কাঁচামাল দিয়ে স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু হলে বাজারে কিছুটা হলেও সরবরাহ ধরে রাখা সম্ভব হবে। লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গত মার্চে জুতা রপ্তানি কমেছে। তবে এপ্রিলে বাস্তবিক চিত্র ফুটে উঠবে। পরে যখন বিশ্বব্যাপী লকডাউন তোলা হবে, তখন ক্রেতারা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কিনবে। পাদুকা রপ্তানিতে যেতে সময় লাগবে। এ হিসাবে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ২৫ কোটি ডলারের পাদুকা রপ্তানি কম হবে। তিনি জানান, তার সংগঠনের ২২২টি কারখানার মধ্যে করোনার আগে ১৫০টি উৎপাদনে ছিল। বর্তমানে সব প্রতিষ্ঠানের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। একদিকে রপ্তানি নেই, অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে বিক্রি বন্ধ রয়েছে। ঈদ বাজার ধরতে হলে এখন সীমিত আকারে খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। তিনি বলেন, ঈদ বাজারে সারাবছরের প্রায় ৪০ শতাংশ পাদুকা বিক্রি হয়। এবার ঈদে বেচাকেনা না থাকলে ব্যবসায়ীদের বড় অঙ্কের ক্ষতি হবে। স্থানীয় বাজারনির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়ের সুযোগ হাতছাড়া হবে। অবস্থা উন্নতির দিকে গেলে ঈদের কথা চিন্তা করে অল্পপরিসরে উৎপাদনে যাওয়া যেতে পারে। বে ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান সমকালকে বলেন, এখনও অবস্থা কিছু বোঝা যাচ্ছে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ঈদের আগে কারখানা খোলা সম্ভব হবে না। এ মুহূর্তে সবাইকে নিয়ে সুস্থ ও ভালো থাকতে হবে। তিনি জানান, তাদের কারখানার উৎপাদন বন্ধ আছে। কারণ কারখানার মধ্যে শ্রমিকের আবাসনের ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে এসে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। শ্রমিকের কথা চিন্তা করে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন তারা। তিনি বলেন, এ খাতে এখনও বেশিরভাগই এসএমই উদ্যোক্তা। তাদের টিকিয়ে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। ঈদে বিক্রি করতে না পারলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এখন পর্যন্ত ঈদ বাজারের বেচাকেনা অনিশ্চয়তায় রয়েছে। পিপলস ফুটওয়্যারের উদ্যোক্তা রেজবীন হাফিজ বলেন, কারখানার অবস্থা খুবই খারাপ। উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এখন শ্রমিক পাওয়া গেলেও কাঁচামালের অভাবে স্বল্পপরিসরেও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আর বিক্রির অবস্থা আরও খারাপ। যেসব শোরুম অর্ডার দিয়েছিল তারাও বাতিল করেছে। এ অবস্থায় ঈদ বাজারের বেচাকেনা করতে না পারলে আরও সংকটে পড়তে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here