Home Apparel এশিয়ার তৈরি পোশাক অর্থনীতিতে অশনিসংকেত

এশিয়ার তৈরি পোশাক অর্থনীতিতে অশনিসংকেত

এশিয়ার উন্নয়নশীল বেশ কয়েকটি দেশের জন্যই তৈরি পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন ও রফতানি খাত। এশিয়ার অগ্রসরমান অর্থনীতিগুলোর বেশির ভাগেরই ৫০ শতাংশের বেশি রফতানি আয় আসে এ খাত থেকে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী রূপ ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাসের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে এশিয়ার রফতানিমুখী পোশাক খাত। খবর বিবিসি।

করোনা পরিস্থিতিতে এশিয়ার পোশাক উৎপাদকদের সামনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুটি বিষয়। প্রথমত, এ অঞ্চলে উৎপাদিত তৈরি পোশাকের সিংহভাগ কাঁচামালই আসে চীন থেকে। আর নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তি এ চীনে। দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করলে প্রতিরোধের জন্য লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় সরকার। এতে চীনে একের পর এক বস্ত্র কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্ত্র রফতানিকারক দেশটি থেকে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল সরবরাহে এ অচলাবস্থার শুরু গত ফেব্রুয়ারিতে।

আর এখন যখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় চীনে কিছু বস্ত্র কারখানা উৎপাদনে ফিরেছে, তখন তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চাহিদা ইস্যু। এশিয়ার তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা উন্নত দেশগুলোর রিটেইলাররা, বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা। করোনা হানা দিয়েছে সেখানেও। ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর সেসব দেশের সরকার কঠোরভাবে লকডাউন পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। আর এতে বেশির ভাগ রিটেইলার তাদের দোকানগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

বিদেশী ক্রেতাদের ব্যবসা সংকোচনের প্রভাব পড়েছে এশিয়ার তৈরি পোশাক উৎপাদন খাতে। অনেক রিটেইলারই এখন তাদের কার্যাদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা পণ্যের কার্যাদেশ বাতিল করে দিচ্ছে তারা। এমনকি শিপমেন্টের জন্য প্রস্তুত এমন পণ্যও তারা আর নিতে চাইছে না। ফলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে বিপাকে। তারা তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে।

আমবাত্তুর ফ্যাশন ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান বিজয় মাহতানি একটি করুণ সত্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা যদি নভেল করোনাভাইরাসে মারা না-ও যায়, তারা না খেতে পেয়েই মরবে।’

স্বাভাবিক সময়ে বিজয় মাহতানি এবং তার দুই ব্যবসায়িক অংশীদার অমিত মাহতানি ও শাওন ইসলামের পরিচালনাধীন কারখানায় কাজ করে প্রায় ১৮ হাজার কর্মী। করোনা মহামারীর কারণে তারা তাদের প্রায় সব কার্যক্রমই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেবল একটি কারখানায় আংশিক কার্যক্রম চলছে। 

বিজয় ও তার অংশীদাররা জানান, তারা যে কর্মীদের বেতন দিতে পারছেন না—এর জন্য কেবল নভেল করোনাভাইরাসই দায়ী নয়। মূল সমস্যা অন্যখানে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাকের শীর্ষ ক্রেতারা চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে, যা উৎপাদকদের বেতন দেয়ার সক্ষমতা হারানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।

তাসকার অ্যাপারেল জর্ডানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত মাহতানি বলেন, ‘কিছু ব্র্যান্ড ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের নীতিবোধ ধরে রাখছে। তারা নগদ অর্থের প্রবাহ কিছুটা হলেও অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে, যেন অন্তত আমরা কর্মীদের বেতনটা দিতে পারি। কিন্তু আমাদের এর বিপরীত দৃশ্যও দেখতে হচ্ছে। অনেক ক্রেতাই উৎপাদিত ও উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা পণ্যের কার্যাদেশ বাতিল করে দিচ্ছে। অনেকে আবার সরবরাহকৃত ও ট্রানজিটে থাকা পণ্যের মূল্য কম দিতে চাচ্ছে। এছাড়া তারা চুক্তি অনুযায়ী মূল্য পরিশোধের সময়সীমা ৩০ থেকে ১২০ দিন বাড়ানোর জন্যও জোরাজুরি করছে।’

এ প্রসঙ্গে অমিতের ব্যবসায়িক অংশীদার বিজয় মাহতানি বলেন, ‘ক্রেতারা কেবল শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থই দেখছে। পোশাক কর্মীদের কষ্টের বিষয়টা তারা ভেবে দেখছে না।’

অবশ্য অব্যাহত সমালোচনা ও চাপের মুখে এইচঅ্যান্ডএম ও জারার মতো কয়েকটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড বলেছে, যেসব কার্যাদেশ চালু রয়েছে, সেগুলোর জন্য তারা পুরো মূল্যই পরিশোধ করবে। 

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান সংকট তো রয়েছেই, ভবিষ্যতেও এর প্রভাব কম নেতিবাচক হবে না। আর এ প্রভাব হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি। শ্রমিক সংকট তৈরি হতে পারে। বেড়ে যেতে পারে কাঁচামালের মূল্য। অন্যদিকে কমে যেতে পারে কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা।

এ অবস্থায় এশিয়ার পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে কেবল আপত্কালীন নগদ সহায়তা দিলেই চলবে না, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে কর অবকাশের মতো দীর্ঘমেয়াদি প্রণোদনার কথাও চিন্তা করতে হবে নীতিনির্ধারকদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here