করোনাভাইরাসের এই নজিরবিহীন সংকটকাল কাটিয়ে উঠতে ও টিকে থাকতে হলে পুরো বিশ্বের জন্য দায়িত্বশীল ব্যবসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক বস্ত্র ও পোশাক সাপ্লাই চেইনের ব্রান্ড কোম্পানি, খুচরা বিক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল ক্রয় কার্যক্রমে লাখ লাখ শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার ও তাদের পরিবারের জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে। কাজেই বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য শ্রম অধিকার, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও টেকসই সাপ্লাই চেইনের প্রতি প্রতিশ্রুতি ধরে রাখা ও সম্মান দেখানোর উপযুক্ত সময় এটিই। সেসব বিষয় মাথায় রেখে ছয়টি উৎপাদক ও রফতানি দেশের (সাসটেনেবল টেক্সাইল অব এশিয়ান রিজন) স্টার নেটওয়ার্কের ৯টি বস্ত্র ও পোশাক ব্যবসায়ী সমিতি বৈশ্বিক ব্রান্ড কোম্পানি, খুচরা বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। বুধবারের বিবৃতিতে ৯টি দাবির কথা বলা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে,
১. গুরুত্বপূর্ণ ক্রয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সাপ্লাই চেইনের শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর সব সম্ভাব্য প্রভাব সচেতনভাবে বিবেচনা করতে হবে।
২. ক্রয় চুক্তির শর্তাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, এতে যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা পূর্ণভাবে মেনে চলা এবং মূল্য ও পারিশ্রমিক পরিশোধের শর্ত নিয়ে নতুন করে আলোচনা না করা।
৩. সরবরাহ ও চালান গ্রহণ এবং উৎপাদিত ও উৎপাদনে থাকা পণ্যের ওপর চুক্তি অনুসারে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। উৎপাদনে থাকা পণ্যের অর্ডার বাতিল করা যাবে না।
৪. উৎপাদন ও ডেলিভারি বাতিল কিংবা বন্ধ রাখতে হলে সরবরাহকারীদের (১০০% এফওবি) ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কিংবা সরবরাহকারীদের শ্রমিকদের সরাসরি মজুরির প্রস্তাব দিতে হবে।
৫. ডেলিভারি ও চালানের ক্ষেত্রে বিলম্বের জন্য সরবরাহকারীরা দায়ী হবেন না এবং এ ধরনের বিলম্বের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে না।
৬. অতিরিক্ত খরচ, তাড়াহুড়ো করে অর্ডার কিংবা অপ্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও নিরীক্ষার মাধ্যমে সরবরাহকারীদের ওপর কোনো অতিরিক্ত চাপ দেয়া যাবে না।
৭. স্থানীয় পরিস্থিতি ও পরিপ্রেক্ষিত ভালো করে বোঝাপড়ার জন্য স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকতে হবে এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
৮. মতবিরোধের ক্ষেত্রে পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান নিশ্চিত করতে সহযোগিতাপূর্ণ নিষ্পত্তি ও সংলাপের আশ্রয় নিতে হবে।
৯. সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ব্যবসায়ী অংশিদারদের সমর্থন দিতে হবে এবং অব্যাহত ব্যবসা চালিয়ে যেতে, সাপ্লাই চেইন ঐক্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
স্টার নেটওয়ার্কের ৯টি বস্ত্র ও পোশাক ব্যবসায়ী সমিতি হল, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজেএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), চায়না ন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল কাউন্সিল (সিএনটিএসি), গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ইন কম্বোডিয়া (জিএমএসি), মিয়ানমার গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমজিএমএ) ও পাকিস্তান হোশিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিএইচএমএ), পাকিস্তান টেক্সটাইল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিইএ), টাওয়েল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান (টিএমএ) ও ভিয়েতনাম টেক্সাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ভিটাস)।