করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই বন্ধ থাকা পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)। তারা বলছে, প্রতিযোগী দেশগুলো ক্রমশই ব্যবসা খুলে দিচ্ছে। তা ছাড়া বিশ্বব্যাপী কিছু পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। কারখানা চালু করা না হলে এই ব্যবসা অন্যদেশে চলে যাবে। পোশাক কারখানার খোলার দাবি জানিয়ে আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব বরাবর চিঠি দেন বিজিবিএর সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসাইন। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রধান রপ্তানি খাতের ব্যবসা ধরে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে পোশাক খাতের কর্মকান্ড ও সংশ্লিষ্ট যানবাহন সীমিত আকারে চালু করা যায় তার পরিকল্পনা জরুরিভাবে নেওয়া উচিত। বিজিবিএ বলেছে, করোনার কারণে প্রায় এক মাস ধরে লকডাউনের কারণে গার্মেন্ট বায়িং হাউস ও পোশাক কারখানার কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে লাখ লাখ পোশাকশ্রমিক ও কর্মকর্তারা প্রায় বেকার। বায়িং হাউজ ও ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিয়তার মুখোমুখি। সংগঠনটি দাবি করেছে, পোশাক খাতের প্রতিযোগী দেশগুলো ক্রমশ ব্যবসা খুলে দিচ্ছে। তা ছাড়া বিশ^ব্যাপী কিছু পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক খাতের যে সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে সেটি অব্যাহত না রাখা হলে হলে প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই ব্যবসা স্থানান্তরের হুমকি রয়েছে। একবার সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পুনরায় তা প্রতিস্থাপন করা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এদিকে বন্ধ থাকা পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা। তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ২৬ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে কারখানা খুলে দেওয়া হতে পারে। শেষপর্যন্ত সেটি হলে ২ মে থেকে সব কারখানা খুলবে। তাতে পোশাকশিল্প মালিকদের সহায়তা করবে সরকার। জানতে চাইলে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, কারখানা খোলার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। কাল বুধবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার কারখানা খোলার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। বাসস জানান, গতকাল প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আটটি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। তখন গাজীপুরে শিল্প কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট, আমাদের লক্ষ্য আছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার। বিশেষ করে যারা রপ্তানি বেজড। ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লকডাউন নিশ্চিত করে সীমিত পর্যায়ে হলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। সেটি কীভাবে করা যায় নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শর্ত মেনেই কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনে রমজান মাস। আমরা তো সবাইকে বসিয়ে রাখতে পারব না। কিছু কিছু কারখানা খোলা রাখতেই হবে। তবে সবাইকে একসঙ্গে আনা যাবে না এবং সুরক্ষা দিয়ে সীমিত আকারে তাদের আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ব্যাপক সমালোচনার পর করোনা মোকাবিলায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যৌথ বিবৃতিতে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। তখন বলা হয়, যেসব কারখানার জরুরি রপ্তানি ক্রয়াদেশ রয়েছে ও যারা করোনা মোকাবিলার জন্য সুরক্ষা পোশাক বা পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি বানাতে তারা কারখানা খোলা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সংগঠন (বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ), কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এবং শিল্প পুলিশকে অবহিত করতে হবে। পরবর্তীতে সরকার ঘোষিত ছুটি বৃদ্ধি করা হলে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।