১০ এপ্রিল, শুক্রবার। গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় ওই একদিনেই কাজ হারিয়েছেন ৪০৬ জন শ্রমিক। পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ সদস্য কারখানাটি জার্সিসহ নানা ধরনের স্পোর্টসওয়্যার তৈরি ও রফতানি করে। এর আগে ৭ এপ্রিল গাজীপুরেরই আরেকটি পোশাক কারখানায় কাজ হারিয়েছেন ১৭০ জন শ্রমিক। শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো বলছে, একই এলাকায় দুটি কারখানায় ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটলেও শুধু গাজীপুরেই নয়, দেশের সব পোশাক কারখানায়ই কম-বেশি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা চলছে।
কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশ থেকে পোশাকের আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ। স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হওয়ায় সেসব দেশে পোশাকপণ্যের চাহিদা কমে গেছে ব্যাপক হারে। আবার এদিকে বাংলাদেশেও ক্রমেই বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও চলছে অঘোষিত লকডাউন। জরুরি ছাড়া শিল্প-কারখানার উৎপাদনও তাই কার্যত বন্ধ।
সূত্র বলছে, এ প্রেক্ষাপটে আসন্ন মন্দা মোকাবেলায় পোশাক শিল্প মালিকরা ব্যয় সংকোচন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছেন। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এর ব্যাপকতা বাড়বে মূলত সংকট কাটতে শুরু করলে। এছাড়া নভেল করোনাভাইরাসজনিত সংকটে শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে সরকারের দিকনির্দেশনাও রয়েছে। তাই ব্যাপক হারে শ্রমিক ছাঁটাই এখনো শুরু হয়নি। তবে আইন অনুসরণ করে ‘রিট্রেঞ্চমেন্ট’ বা ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের বিষয়টি অস্বীকার করেননি সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, কাজের বয়স এক বছরের নিচে এমন শ্রমিকদের আইনসম্মত ‘রিট্রেঞ্চমেন্ট’ হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রতিটি সদস্যকে এমনটা না করতে অনুরোধ করেছি। গত রোববারও আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি।
শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় সব পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাছাই করা হচ্ছে এক বছরের কম সময় ধরে কাজ করছেন এমন শ্রমিকদের। কিছু কারখানায় ভবিষ্যতে ছাঁটাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেতন পরিশোধ করে শ্রমিকদের পরিচয়পত্র রেখে দেয়া হলেও শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধে পরিচয়পত্র আবার ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার সাধারণ ছুটি চলাকালীন শ্রমিক ছাঁটাই আইনসম্মত নয় বলেও মালিকরা গণহারে শ্রমিক ছাঁটাই থেকে বিরত আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এক পরিদর্শক বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার নেতিবাচক প্রভাব এখন বৈশ্বিক বাস্তবতা। মন্দাও আসন্ন। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন কোনো কাজ আসছে না। এ অবস্থায় মানবিক বিবেচনায় শ্রমিক দীর্ঘদিন বসিয়ে রেখে বেতন দেয়া কোনো মালিকের পক্ষেই সম্ভব না। যাদের আর্থিক সক্ষমতা নাজুক তারা এখনই শ্রমিক ছাঁটাই করতে চাইছেন। সরকারি সহায়তা কাজে লাগিয়েও তিন মাস শ্রমিক বসিয়ে রাখা মালিকদের পক্ষে কঠিন বলে জানিয়েছেন তারা। বর্তমানে মার্চের বেতন পরিশোধ চলছে, সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলেও কিছু কারখানা জরুরি কাজে সচল আছে।
দেশের শিল্প অধ্যুষিত আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ময়মনসিংহ—এই ছয় এলাকায় বিজিএমইএ সদস্য পোশাক কারখানা আছে ১ হাজার ৮৮২টি। এর মধ্যে মার্চের বেতন পরিশোধ করা কারখানার সংখ্যা গতকাল ছিল ২৪৭। বিকেএমইএ সদস্য পোশাক কারখানা ১ হাজার ১০১টি। এর মধ্যে মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে এমন কারখানার সংখ্যা গতকাল ছিল ১২৩।
এদিকে সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও গতকাল খোলা ছিল বেশকিছু কারখানা। শিল্প অধ্যুষিত ছয় এলাকায় বিজিএমইএ সদস্য ১ হাজার ৮৮২ কারখানার মধ্যে গতকাল বন্ধ ছিল ১ হাজার ৮৫৬টি। আর বিকেএমইএ সদস্য ১ হাজার ১০১ কারখানার মধ্যে বন্ধ ছিল ১ হাজার ১০০টি। এ হিসাবে দুই সংগঠন মিলিয়ে খোলা ছিল ২৭টি কারখানা।