করোনার কারণে
একের পর এক পোশাকের চলমান ও ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হচ্ছিল। ফলে নতুন ক্রয়াদেশ
পাওয়া তো দূরে, কারখানা উৎপাদিত পোশাক নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন পোশাকশিল্পের
মালিকেরা। তবে এই কালোমেঘ ধীরে ধীরে কাটবে সেই আভাস মিলছে।
সুইডেনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম গত শনিবার তাদের মনোনীত কারখানায়
ইতিমধ্যে যেসব পোশাক তৈরি হয়েছে সেসব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অনেকটা সেই পথেই হাঁটবে
বলে পোশাক রপ্তানিকারকদের ইতিমধ্যে জানিয়েছে আরও কয়েকটি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান।
তাদের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্র্যান্ড পিভিএইচ, স্পেনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা
প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্র্যান্ড মাকর্স অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস),
ফ্রান্সভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কিয়াবি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা
ব্র্যান্ড টার্গেট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় ক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম এইচঅ্যান্ডএম। তারা বাংলাদেশ থেকে বছরে ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে থাকে। এমঅ্যান্ডএস নেয় ১০০ কোটি ডলারের। ইন্ডিটেক্সও বাংলাদেশ থেকে ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পোশাক নেয়। কিয়াবি নিয়ে থাকে ৫০ থেকে ৭০ কোটি ডলারের পোশাক। ফলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মালিকেরা ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন।
একাধিক পোশাক রপ্তানিকারক জানান, পিভিএইচ বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় উৎপাদিত পণ্য নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এমঅ্যান্ডএস পণ্য নেওয়া ও অব্যবহৃত কাঁচামালের দাম দেওয়ার কথা মৌখিকভাবে জানিয়েছে। তবে তারা কি পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ করবে সেটি চলতি সপ্তাহে চূড়ান্ত করবে। ইন্ডিটেক্স মৌখিকভাবে নিশ্চিত করেছে, তারা পণ্য নেওয়া বন্ধ করবে না। টার্গেট উৎপাদিত পণ্য নেওয়ার পূর্ণ নিশ্চয়তা দিয়েছে। ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন ক্রয়াদেশের বিষয়ে বলছে, পরিস্থিতি উন্নতি হলে তারা নতুন ক্রয়াদেশ দেবে। তবে চীনের অবস্থা স্বাভাবিক হলেও কিছু ক্রেতা ক্রয়াদেশ দেওয়ার বিষয়ে আশাবাদ জানিয়েছে।
কিয়াবির পোশাক সরবরাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের রাইজিং গ্রুপ। নয় বছর ধরে ব্র্যান্ডটির জন্য পোশাক প্রস্তুত কওে এই প্রতিষ্ঠানটি। রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিয়াবি উৎপাদিত পোশাক ধাপে ধাপে নেওয়ার কথা আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।’
করোনাভাইরাসের কারণে পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হওয়ার তথ্য সর্বপ্রথম ১৭ মার্চ প্রকাশ করে বিজিএমইএ। সেদিন সংগঠনটি জানায়, ২০টি কারখানার ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। স্থগিত হয়েছে ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ। তারপর প্রতিদিনই ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিলের তালিকাটি দীর্ঘ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯ কারখানার ৯২ কোটি পিছ পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হয়েছে, যার রপ্তানি মূল্য ২৯০ কোটি ডলার। এতে করে ২১ লাখ পোশাকশ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করে বিজিএমইএ।
ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক ৪১ ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকে ই-মেইল করেন। তিনি ক্রেতাদের অনুরোধ করেন, ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করবেন না। উৎপাদন চলতে দিন। জরুরি অবস্থায় আমরা বিলম্বিত পরিশোধব্যবস্থা মেনে নেব। তবে বর্তমানে যে স্টকগুলো রয়েছে তা নিয়ে নিন, যাতে উৎপাদন চলে এবং কর্মীদের সময়মতো বেতন দিতে পারি আমরা।
পরে বিজিএমইএর সভাপতি জার্মানির কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নবিষকমন্ত্রী গার্ড মুলারকে ই-মেইলে করেন। এতে তিনি জার্মানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তাঁর দেশের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত না করে। একই আহ্বান জানিয়ে রুবানা হক এক ভিডিও বার্তায় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের এই সংকটের সময় পোশাকশ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানান।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছে, উৎপাদিত ও উৎপাদনে থাকা পণ্য নিয়ে নেবে। তাদের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করব, কারখানার তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে দাম পরিশোধের শর্তগুলোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।