চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না হওয়া কনটেইনার পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক খাতের। পোশাক খাতের কাঁচামাল ও সরঞ্জামভর্তি প্রায় ১৪ হাজার কনটেইনার পড়ে আছে বন্দরে। এসব কনটেইনার খালাস হলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বন্দর পুরোপুরি স্বাভাবিক রাখা যেত। এসব কনটেইনার খালাসের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আজ বুধবার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়েছে। আবার খালাস না হওয়া কনটেইনার বেসরকারি ডিপোতে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ খালাস না হওয়া কনটেইনারের তথ্য বিশ্লেষণ করে গত মঙ্গলবার এই হিসাব প্রকাশ করেছে। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, পোশাক খাত ছাড়াও বন্দরে এখন শিল্প খাতের কাঁচামাল রয়েছে প্রায় ৯ হাজার কনটেইনার। সাধারণ ছুটির পর থেকে বাণিজ্যিক পণ্য শুল্কায়ন করছে না কাস্টমস। এতে বাণিজ্যিক পণ্যেরও স্তূপ জমছে। বাণিজ্যিক পণ্যবাহী কনটেইনার বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১১ হাজারে। সব মিলিয়ে বুধবার বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ছিল ৪৬ হাজার ৬৯০টি, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার বেশি।
পোশাক খাতের আমদানি কাঁচামাল খালাস না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ ছুটিতে কারখানার বাণিজ্যিক ও স্টোর শাখার কর্মীরা ছুটিতে চলে গেছেন। আবার পরিবহনসংকট, ব্যাংকিং সময় কমিয়ে আনার মতো সিদ্ধান্তের কারণে চাইলেও দ্রুত পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। এরপরও বন্দর সচল রাখতে সংগঠনের পক্ষ থেকে সদস্যদের পণ্য খালাসের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
পণ্য খালাসের হার না বাড়লে বন্দরের সামনে আরেকটি পথ খোলা আছে, সেটি হলো বেসরকারি ডিপোতে এসব কনটেইনার সরিয়ে নেওয়া। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদনের দরকার হবে। গত মঙ্গলবার সার্কিট হাউসে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের উদ্যোগে যে সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেও বিষয়টি আলোচনা হয়। এই আলোচনার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ ডিপো মালিক সমিতির কাছে জানতে চেয়েছে, তাদের কত কনটেইনার রাখার জায়গা ফাঁকা আছে।
জানতে চাইলে ডিপো মালিক সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে জানান, এখন চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপোতে ১৮ হাজার ৭৭৫ একক কনটেইনার রাখার জায়গা রয়েছে। রাজস্ব বোর্ড অনুমোদন দিলে বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার এনে ডিপোতে রাখতে তাদের কোনো সমস্যা নেই। বন্দরকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর বন্দর আগের মতো ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্য খালাসের জন্য যেসব সংস্থার অনুমোদন দরকার, সেগুলোর কার্যক্রম শুরুতে খুবই সীমিত ছিল। যেমন রাজস্ব বোর্ড থেকে শুরুতে শুধু নিত্যপণ্য ও ওষুধের কাঁচামাল ও সামগ্রী শুল্কায়ন করে খালাস নেওয়ার আদেশ জারি করে। পরে দুই দফায় বাণিজ্যিক পণ্য ছাড়া সব ধরনের আমদানি পণ্য খালাসের আদেশ জারি করে সংস্থাটি। এখন বাণিজ্যিক পণ্যও শুল্কায়ন করার নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার দাবি উঠেছে। এ ছাড়া আমদানি–রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যাংকের কার্যক্রমের সময় বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা।
জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাস হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। পণ্য খালাসে যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো ব্যবহারকারীরা গত মঙ্গলবারের সভায় তুলে ধরেছেন। বন্দরের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। বেসরকারি ডিপোতেও জায়গা খালি থাকার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে ব্যবসায়ীদের পণ্য খালাসের হার বাড়ানোর বিকল্প নেই।
দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান দ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। গত মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানি পণ্যের প্রায় ৮২ শতাংশ এবং রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশই আনা-নেওয়া হয়। করোনার এই সময়ে নিত্যপণ্য এবং ওষুধের কাঁচামাল আসছে এই বন্দর দিয়ে। ফলে দেশের খাদ্য সরবরাহ এবং জীবনরক্ষাকারী কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ রাখতে বন্দর সচল রাখা সবচেয়ে জরুরি।