শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে দেরিতে হলেও পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ তাদের সদস্য কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। তারপরও বুধবার সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়নসিংহ ও খুলনায় ৬৭টি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা উৎপাদন কাজ চালিয়েছে। এসব অঞ্চলের অন্যান্য ৪৩৮টি শিল্পকারখানাও চালু ছিল। এই হিসাবে ঢাকা মহানগরের তথ্য নেই।
শিল্প পুলিশ জানায়, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ৩ হাজার ৩৭১টি পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকলসহ ৭ হাজার ৬০২টি শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে বুধবার চালু ছিল ৫০৫টি। তবে মঙ্গলবার উৎপাদনে ছিল ৫৪৬টি শিল্পকারখানা।
বুধবার উৎপাদনে থাকা ৫০৫টি শিল্পকারখানার মধ্যে পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকলের সংখ্যা ৬৭টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৪৩টি ও বিকেএমইএর ৫টি রয়েছে। আর বিটিএমএর সদস্য ১৯টি বস্ত্রকল চালু রয়েছে। বেপজার অধীনে ইপিজেডগুলোতে ৩৬৪ কারখানার মধ্যে চালু ছিল মাত্র একটি। বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুরের জয়নাল নিট কম্পোজিট, ফ্যাশন স্টেপ, ট্রাউজার ল্যান্ড, তমা নিটওয়্যার, ওনাস অ্যাপারেলস, বাংজিন বাংলাদেশ, ওরিয়েন্ট এলিউর লিনগেরি, ইসলাম গ্রুপের ইসলাম নিটওয়্যার ও ইসলাম ডিজাইন, হরাইজন ফ্যাশন, কোয়াট্রো ফ্যাশন, হ্যাগ, রোমো ফ্যাশন, কোস্ট টু কোস্ট, আইরিশ ডিজাইন, দ্যাটস ইট ফ্যাশন, গ্রামীণ ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফ্যাশন, অকোটেক্স, আশুলিয়ায় কিউট ড্রেস, মিলেনিয়াম, আজিজ ফ্যাশনস, ওরিয়ন ফ্যাশন ইত্যাদি পোশাক কারখানা বুধবার উৎপাদনে ছিল।
শুরুতে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও কারখানা বন্ধ রাখতে চায়নি সরকার ও পোশাকশিল্প মালিকেরা। সমন্বয়ের অভাব ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে দল বেঁধে পোশাকশ্রমিকদের এক দফা যাওয়া-আসার পালা শেষ হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর গত সোমবার করোনার এই মহামারির সময়ে প্রথমবারের মতো পোশাক কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। অবশ্য তার আগে সরকারের ওপর মহল থেকে কারখানা বন্ধ করতে সংগঠন দুটিকে বলা হয়।
সোমবার বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যৌথ বিবৃতিতে বলে, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানা বন্ধ থাকবে। তবে যেসব কারখানা সুরক্ষা পোশাক বা পিপিই বানাচ্ছে এবং যাদের জরুরি রপ্তানি ক্রয়াদেশ আছে, কেবল তারাই কারখানা চালাতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সংগঠন, শিল্প পুলিশ এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। সেদিন রাতেই বিটিএমএ একইভাবে বস্ত্রকল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক জানান, উৎপাদনে থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে ৪টি পিপিই বানাচ্ছে।
বিকেএমইএর সদস্য ৫টি কারখানা চালুর বিষয়ে সংগঠনটির সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘প্রতিটি কারখানা করোনা প্রতিরোধে জরুরি সুরক্ষা পোশাক বা পিপিই বানাচ্ছে। আমরা সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি।’
অন্যদিকে বিটিএমএর সচিব মনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার চারটি বস্ত্রকল চালু থাকার তথ্য পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বুধবার আমাদের জানামতে কোনো বস্ত্রকল চালু ছিল না। শিল্প পুলিশ আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
মজুরি দেয়নি অধিকাংশ কারখানা
অধিকাংশ পোশাক কারখানা এখনো মজুরি পরিশোধ করেনি। যদিও কারখানা বন্ধ থাকার কারণে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ১৬ এপ্রিলের মধ্যে মজুরি পরিশোধের অনুরোধ করেছে। কিছু কারখানা বন্ধের মধ্যেও মজুরি পরিশোধ করেছে।
শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়নসিংহ ও খুলনার ১ হাজার ৮৮২ কারখানার মধ্যে ১৮৬টি বেতন-ভাতা দিয়েছে। আর বিকেএমইএর ১ হাজার ১০১টি কারখানার মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছে ৫৭টি।
উৎপাদন বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার সারা দিন কয়েক ধাপে ২ হাজার শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করেছে নারায়ণগঞ্জের প্লামি ফ্যাশনস নামের নিট পোশাক কারখানা। প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো বেশ কিছু ছবিতে দেখা যায়, করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ৩ থেকে ৪ ফুট দূরত্বে নারী শ্রমিকেরা দাঁড়িয়ে আছেন। সুশৃঙ্খলভাবে তারা কাউন্টার থেকে বুঝে নিচ্ছেন মার্চ মাসের মজুরি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ২৬ মার্চ থেকে আমাদের কারখানা বন্ধ। করোনার এই বিশেষ পরিস্থিতিতে মজুরি দেওয়ার জন্য কয়েক ধাপে শ্রমিকদের আসতে বলা হয়। বসানো হয়েছিল ১০টি বুথ। আমরা সারা দিন ধরে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করেছি। কারখানায় অনেক খোলা জায়গা থাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজটি করা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই উদ্যোক্তা।
একইভাবে গাজীপুরের শ্রীপুরে ডিজাইনটেক্স লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানা মঙ্গলবার সামাজিক দূরত্ব মেনে শ্রমিকদের মজুরি দিয়েছে। কারখানাটিতে কাজ করেন ২ হাজার ৪০০ শ্রমিক। কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব শ্রমিকই মঙ্গলবার মজুরি নিয়েছেন।’