গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই আর লে-অফে (সাময়িক বন্ধ) অশান্ত হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয়ে সভায় মালিকপক্ষ ঈদের আগে কোনো কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে একমত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কারখানা লে-অফ না করার বিষয়েও একমত হয়েছে।
ইতিমধ্যে যেসব কারখানায় লে-অফ হয়েছে সেখানে শ্রমিকদের মোট বেতনের ৬০ শতাংশ অর্থ দেওয়ার বিষয়েও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বিনিময়ে লে-অফ ঘোষিত কারখানা প্রণোদনার অর্থ পাবে না বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি মালিক পক্ষের। ইস্যুটি চূড়ান্ত করতে আজ বুধবার ফের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। লে-অফ হলে শ্রমিকেরা আইন অনুযায়ী প্রাপ্য হয় মোট বেতনের ৫২ শতাংশ অর্থ। অন্যদিকে এক বছরের কম সময় থাকা কর্মীরা কোনো আর্থিক সুবিধা পায় না।
এদিকে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গার্মেন্টস খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সভা হয়েছে। সভায় দূর-দূরান্তে থাকা শ্রমিকদের কাজে না নিতে মালিকপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়। তবে মে মাস থেকে যারা কাজ করবে না বা কাজে নেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের মোট বেতনের সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ দিতে চায় মালিকপক্ষ। সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, আজ ফের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভায় এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ ও এফবিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, আগামী ঈদের আগে শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে কারখানা মালিকরা একমত হয়েছেন। আমরা চাই, শ্রমিক-মালিক উভয়েই বেঁচে থকুক। আগামীকালের (আজ বুধবার) সভায় একটি সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করছি। অবশ্য শ্রমিক নেত্রী ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ৬০ শতাংশ নয়, পুরো বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, এ খাত সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নিয়েও কেন শ্রমিকের তিন মাসের বেতন দিতে পারবে না। একই সঙ্গে শ্রমিক ছাঁটাইয়েরও বিরোধিতা করেন তিনি। এদিকে গত রবিবার কারখানা খোলার পর থেকে ক্রমেই বাড়ছে কারখানা চালুর সংখ্যা। গতকাল মঙ্গলবার আরো প্রায় ১ হাজার ১০০ কারখানা নতুন করে খুলেছে। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত কারখানা খুলেছে ২ হাজার ৯১৬টি। এর মধ্যে শ্রমিক ছাঁটাই ও বেতন-ভাতা ইস্যুতে গতকালও গাজীপুর, সাভারসহ কিছু এলাকায় শ্রম অসন্তোষ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। শ্রমিকদের শিল্পঞ্চলমুখী প্রবাহও ঠেকানো যাচ্ছে না? যে যেভাবে পারছে, কর্মস্থলে ছুটছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এতে শুরুতে বন্ধ করে দেওয়া হয় গার্মেন্টসসহ অন্যান্য খাতের কারখানাও। এ খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সঙ্কট সমাধানে সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। তবে ঢালাও লে-অফের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এক আদেশে জানিয়ে দেয়, লে-অফ হওয়া কারখানা সরকারের প্রণোদনা সুবিধা পাবে না। এর পরই বিচলিত হয়ে পড়ে মালিকপক্ষ।
গতকাল নতুন করে খুলেছে ১১শ কারখানা :শিল্পাঞ্চল পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে আরো ১ হাজার ৯৬টি কারখানা খুলেছে। সব মিলিয়ে দেশের শিল্পাঞ্চলে গতকাল নাগাদ খুলেছে ২ হাজার ৯১৬টি কারখানা। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এলাকার শিল্পকারখানা অন্তর্ভুক্ত নেই। ডিএমপি এলাকার কারখানা হিসাবভুক্ত হলে গতকালের খোলা কারখানার সংখ্যা আরো বাড়বে। শিল্পাঞ্চল পুলিশের আওতাধীন এলাকা হলো গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা।
সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানা খুলেছে ৯৯৩টি, বিকেএমইএর সদস্য ৩৮৯টি, বস্ত্র খাতের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য ১৩২টি, বেপজা এলাকার ২০৮টি। এর বাইরে অন্যান্য খাতের আরো ১ হাজার ৩৪৬টি কারখানা চালু হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশের এসপি মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, দেশের পাঁচটি শিল্পাঞ্চলের মধ্যে গাজীপুর এলাকায় কারখানা খোলার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মোট চালু হওয়া কারখানার অর্ধেকের বেশি খুলেছে এই এলাকায়। গতকাল পর্যন্ত এই এলাকায় খুলেছে ১ হাজার ৫১৮টি কারখানা। এছাড়া চট্টগ্রাম শিল্পাঞ্চলে ৫৪৮টি, ঢাকায় (সাভার, আশুলিয়া) ৪৬০টি, নারায়ণগঞ্জে ২২৫টি, ময়মনসিংহে ৭৯টি ও খুলনায় চালু হয়েছে ৮৬টি কারখানার উত্পাদন কার্যক্রম।