রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় এপ্রিল মাসের বেতন প্রদান প্রক্রিয়া শেষ সময়ে এসে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তাদের ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে বেতন দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কারখানা মালিকদের অনুরোধে তা আটকে গেছে। শ্রমিকদের বেতনের পরিমাণ আবার নতুন করে নির্ধারণ করা হচ্ছে। যারা কারখানায় কাজ করেছেন তারা পুরো বেতন পাবেন। আর যারা আংশিক কাজ করেছেন আনুপাতিকহারে এবং যারা কারখানায় উপস্থিত ছিলেন না তারা ৬৫ শতাংশ বেতন পাবেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার বেশ কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর প্রস্তুতি ছিল বলে জানা গেছে। কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতনশীটসহ যে ঋণের আবেদন করেন সেই অনুযায়ী বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত সোমবার সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঐ সিদ্ধান্ত আলোকে বেতন দিতে নতুন করে বেতনশীট প্রস্তুত করেছে কারখানাগুলো। সেই বেতনশীট গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠিয়েছেন অনেক কারখানা। আবার অনেক কারখানা নতুন বেতনশীট প্রস্তুত করতে পারেনি। নতুন বেতনশীট অনুযায়ী শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে বেতন পাঠানো হবে। আজ বৃহস্পতিবার দুয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন পাবেন বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার হাতেগোনা দুয়েক কারখানা শ্রমিকরা বেতন পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শেষ কর্মদিবসের এপ্রিলের বেতন হওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম মাস হিসেবে অনেক মালিক ঋণের জন্য পরেও আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ মে ২০০০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলোকে ছাড় করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঐ দিনই শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি আটকে গেছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান। ঐ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা ৬৫ শতাংশ এবং চালু কারখানার শ্রমিক পুরো বেতন পাবেন।
তবে বিজিএমইএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব শ্রমিক কাজ করেছেন তারা পুরো বেতন এবং যারা কাজে আসেননি তারা ৬৫ শতাংশ বেতন পাবেন। যারা কিছুদিন কাজ করেছেন তারা আনুপাতিক হারে বেতন পাবেন।
বেতন দেওয়ার বিষয়ে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক বলেন, আমরা তিনটি কারখানার বেতন দিয়েছি। তবে বেতন দেওয়ার জন্য ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়া সাপেক্ষে আমরা বেতন দিচ্ছি।
এদিকে বিকাশের মাধ্যমে এখন কোনো কারখানার বেতন দেওয়া হয়নি। তারা বলছেন, ব্যাংক থেকে নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বেতন দেবেন।
করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানিমুখী কারখানার মালিকদের সহায়তা দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে সরকার। এককালীন ২ শতাংশ সার্ভিজ চার্জ দিয়ে দুই বছর মেয়াদের ঋণ নিতে পারবেন মালিকরা। এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসের বেতন দেওয়ার জন্য ঋণ নেওয়া যাবে। তবে ঋণের টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে পাঠাবে। এই অ্যাকাউন্টে থেকে ক্যাশআউট চার্জ কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বোচ্চ ৮ টাকা চার্জ পাবে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ৪ টাকা শ্রমিক দেবে বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অথবা প্রতিষ্ঠান।