প্রতি বছরই ঈদের আগে দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শ্রম অসন্তোষ দেখা দেয়। অসন্তোষের আশঙ্কা আছে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেও। শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, ঈদের আগে সম্ভাব্য ব্যর্থদের তালিকায় আছে ১ হাজার ৯০টি কারখানা।
দেশের শিল্প অধ্যুষিত আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা এ ছয় এলাকায় সব খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে ৭ হাজার ৬০২টি। যার ৩ হাজার ৩৭২টি বস্ত্র ও পোশাক খাতের। এছাড়া বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত কারখানার সংখ্যা ৩৬৪। বাকি ৩ হাজার ৮৬৬টি কারখানা অন্যান্য খাতের।
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৭ হাজার ৬০২টি কারখানার মধ্যে বেতন বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৯০টি, যার মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ সদস্য কারখানা ৪৪২টি। একই খাতের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য কারখানা ১২৬টি। বস্ত্র খাতের শিল্প মালিক সংগঠন বিটিএমএ সদস্য কারখানা ৪৪টি। বেপজার আওতাভুক্ত কারখানা ৪১টি। বেতন-বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানা তালিকার বাকি ৪৩৭টি অন্যান্য খাতের।
জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, খাতভিত্তিক সংগঠনগুলো যেমন বিজিএমইএসহ সবাইকে নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি যেন শ্রমিকরা হাসিমুখে ঈদ করতে পারেন এবার ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থদের তালিকায় কারখানা এত বেশি কেন জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, সার্বিক প্রেক্ষাপটে এবার তো সংখ্যা বেশি হবেই। শুনেছি অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।
শিল্প পুলিশের তথ্যে দেখা যায়, বেতন-বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানা সবচেয়ে বেশি গাজীপুর এলাকায়। এ এলাকায় মোট কারখানা আছে ২ হাজার ৭২টি। যার মধ্যে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানার সংখ্যা ৫১৪টি। যার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ২৩৫, বিকেএমইএর সদস্য ৪৭টি, বিটিএমইএর সদস্য কারখানা ২৫টি। বেতন-বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানা তালিকার বাকি ২০৭টি অন্যান্য খাতের।
গাজীপুরের পরই সবচেয়ে বেশি সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানা আশুলিয়ায়। এ এলাকায় মোট ১ হাজার ৩৫৬টি। এর মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানা ২৬৬টি। যার ১১০টি তৈরি পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য, বিকেএমইএর ২৪টি এবং বিটিএমএর ১০টি। বেপজার আওতাভুক্ত কারখানা সাতটি এবং অন্যান্য খাতের সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানা ১১৫টি।
চট্টগ্রামে সব খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে ১ হাজার ২২৯টি। এর বেতন বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন কারখানার সংখ্যা ১৯৭টি, যার ৭৪টি বিজিএমইএর সদস্য, ১৮টি বিকেএমইএর, বিটিএমএ সদস্য কারখানা চারটি। বেপজার আওতাভুক্ত কারখানা ৩০টি। বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ অন্যান্য খাতের কারখানা আছে ৭১টি।
নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শিল্প পুলিশের আওতায় কারখানা আছে ২ হাজার ৪৫৯টি। এর মধ্যে বেতন বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন কারখানা ৮৫টি, যার ১৮টি বিজিএমইএর সদস্য, বিকেএমইএর সদস্য ৩৭টি এবং বিটিএমএর সদস্য কারখানা দুটি। বেপজার আওতায় বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন কারখানা আছে চারটি। এছাড়া অন্যান্য খাতের কারখানা আছে ২৪টি।
ময়মনসিংহ এলাকায় মোট কারখানা আছে ১৩১টি। এর মধ্যে ঈদের আগে বেতন বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন কারখানা আছে ১১টি। যার পাঁচটি বিজিএমইএর সদস্য, বাকি ১৭টি অন্যান্য খাতের। খুলনা শিল্প পুলিশের আওতায় কারখানা আছে ৩৫৫টি। যার মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন কারখানা আছে অন্যান্য খাতের ১৭টি।
কভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে চলতি বছর সামগ্রিক শিল্প পরিবেশ অনেকটাই ভিন্ন গত ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ এড়াতে বন্ধ ছিল অনেক শিল্প-কারখানা। এপ্রিলে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধের শুরু থেকেই ছাঁটাই, বকেয়া পরিশোধ নিয়ে বর্তমানে শিল্প এলাকাগুলোতে চলমান আছে শ্রমিক অসন্তোষ। এখনো মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেনি গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয় শিল্প এলাকায় এমন কারখানা ছিল ৩৩২টি। আবার গত এপ্রিলের বেতন অপরিশোধিত ছিল এমন কারখানা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪ হাজার ৭১২টি।
সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এপ্রিল মাসের পূর্ণাঙ্গ পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। আবার একইভাবে বোনাসও শ্রমিকরা আংশিক পাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে শিল্প এলাকাগুলোতে শ্রম অসন্তোষ চলমান রয়েছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে প্যারাডাইজ কেবলস লিমিটেডের কারখানায়।
আশুলিয়া এলাকায় শতভাগ বেতনের দাবিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এনআরএল লিমিটেডের শ্রমিকরা বোনাসের দাবিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্মার্ট নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা। মার্চ ও এপ্রিলের বেতনের দাবিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফোজিয়া অ্যান্ড ফাহিম ফ্যাশনের শ্রমিকরা। এপ্রিলের বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে অসন্তোষ দেখিয়েছেন প্রুডেন্ট ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা।
চট্টগ্রামের অসন্তোষ দেখিয়েছেন আলফা নিট লিমিটেডের শ্রমিকরা এপ্রিলের বেতন নিয়ে অসন্তোষ ছিল আদিলা লিমিটেডের শ্রমিকদের। আবার অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেডের শ্রমিকরাও এপ্রিলের বেতনের দাবিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে এমন কারখানাগুলোর মধ্যে আছে স্পেস সোয়েটার, নাইট অ্যাঞ্জেল, বেলিশিমা অ্যাপারেলস, এটিএস সোয়েটার, এসএস সোয়েটার, ইউনিটেক্স অ্যাপারেলস ও এলিগেন্স গ্রুপ।