করোনায় সারা বিশ্বের মতো বড় বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এরই মধ্যে তিনটি বড় খাত মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রথমত, পোশাক রফতানি তলানিতে নামায় মোট রফতানি আয়ে ধস নেমেছে। দ্বিতীয়ত, ২৬ মার্চ থেকে দুই মাসের অবরুদ্ধ (লকডাউন) অবস্থার কারণে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুরোপুরি স্থবিরতা নেমে আসে, এতে দেশজ উৎপাদন ও চাহিদা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। তৃতীয়ত, রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় কমতে শুরু করেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ‘কান্ট্রি ফোকাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি শুক্রবার প্রকাশিত হয়। এর আগে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আইএমএফ, তা ২১ মে সম্পন্ন হয়। এ মূল্যায়ন নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে চলতি বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে নেমে আসবে। যদিও করোনা সংকটের আগে সংস্থাটি ৭ শতাংশে বেশি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। ২০২১ সালে তা বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশে কাছাকাছি হবে বলে মনে করে আইএমএফ। ২০২১ সালের পূর্বাভাসটি নির্ভর করছে করোনাভাইরাসের বিস্তার কমে যাওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসার ওপর।
আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘন বসতিপূর্ণ দেশ, এ কারণে কোভিড-১৯ এর মতো মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় দেশটিকে অনেকগুলো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল সীমিত স্বাস্থ্য অবকাঠামো। কোভিড-১৯ দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার সক্ষমতাকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছে। এজন্য উন্নয়নের অংশীদারদের থেকে যথেষ্ট সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে আইএমএফ। চিকিৎসা সরঞ্জাম, পরীক্ষা এবং কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে দেশটির কমপক্ষে ২৫ কোটি ডলার প্রয়োজন।
আইএমএফ বলছে, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত তৈরি পোশাক রফতানি ও রেমিটেন্স মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। করোনার প্রভাবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে। এতে রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ক্ষেত্রেও ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের রফতানি খাতে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। মূলত পোশাক খাতে ধসের কারণে সার্বিকভাবে এ রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে। পোশাক খাত থেকে মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে। এপ্রিলে গতবছরের তুলনায় রফতানি আয় ৮৩ শতাংশ কমেছে।
আর আমদানি খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে করোনা আঘাত না হানলে চলতি ও আগামী অর্থবছর আমদানি ও রফতানি খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকত বলে মনে করছে আইএমএফ। করোনার কারণে রেমিটেন্সেও বাংলাদেশের জন্য সুখবর নেই। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় করোনার ধাক্কা ও জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রেমিটেন্সের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসে। আইএমএফের হিসাবে চলতি অর্থবছর রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা না থাকলে যা ১৮ শতাংশে পৌঁছাত। আর আগামী অর্থবছর রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে কমে যাবে। সেসময় ৭ দশমিক ১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে এ খাতে।
এছাড়া করোনার কারণে ব্যক্তি খাতে সঞ্চয় প্রবণতা কমে যাবে। সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও অনেক কমে যাবে। বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি খাতেও বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। ঋণ-জিডিপি অনুপাতে আগামী বছর বেড়ে ৪১ শতাংশ হবে, যা ২০১৯ সাল শেষে ৩৬ শতাংশ ছিল।