কৃষি খাতে শ্রমিক সংকট রয়েছে ইতালিতে। অন্যদিকে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ খুঁজছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃষি খাতে শ্রমিক নেয়ার অনুরোধ করেছে ঢাকা। এতে ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছে ইতালি। এর মধ্য দিয়ে দেশটির শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭০ সালে ইতালির প্রায় ২৩ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে বর্তমানে তা ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ফলে দেশটি কৃষি খাতে বিদেশী শ্রমিক নিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে। এক সময় বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি শ্রমিকরা ইতালি যেতেন। পরবর্তী সময়ে এসব শ্রমিক দেশে না ফেরার কারণে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয় ইতালি। এখন শ্রমিক সংকটের কারণে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি কৃষি শ্রমিক নেয়ার প্রস্তাব ফের বিবেচনা করছে দেশটির সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিক রফতানির প্রধান বাজারগুলো একেবারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশী শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শ্রমিক রফতানির নতুন কোনো বাজারও তৈরি হয়নি। এ পরিস্থিতিতে কোনো দেশের কাছ থেকে শ্রমিক নেয়ার আশ্বাসটাও বাংলাদেশের জন্য বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ শুধু ইতালি নয়, স্পেনের কাছেও শ্রমিক নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম শ্রমিক রফতানি করা হয়েছিল ২০০২ সালে। ২০০২ সালে ১৯ জন শ্রমিক দেশটিতে গিয়েছিলেন। ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইতালিতে ৫৫ হাজার ৫২০ জন শ্রমিক রফতানি করে বাংলাদেশ। ১৮ বছরের মধ্যে ২০০৭ সালে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক রফতানি হয়েছিল, ১০ হাজার ৯৫০ জন। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে দেশটিতে শ্রমিক রফতানি করে বাংলাদেশ। তবে এরপর এটি একেবারে কমে যায়। ২০১৯ সালে দেশটিতে শ্রমিক রফতানি হয়েছিল মাত্র দুজন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বণিক বার্তাকে বলেন, আগে ইতালি বিভিন্ন দেশ থেকে কৃষি খাতে মৌসুমি শ্রমিক নিত। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে কৃষি খাতে যারা মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে যেতেন, তারা কোনো দিন ফিরে আসেননি। ইদানীং আমরা ইতালির সরকারকে শ্রমিক পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছি, তারা এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। কৃষি খাতে মৌসুমি শ্রমিক নেয়ার তালিকায় বাংলাদেশকে যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছে। ইতালি সরকার এটি তাদের সংসদে পেশ করবে। সংসদ এ প্রস্তাব গ্রহণ করলে বাংলাদেশ থেকে কৃষি খাতে মৌসুমি শ্রমিক ইতালি যেতে পারবেন।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দেশভিত্তিক ফ্যাক্টবুকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের হিসাবমতে ইতালিতে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানে রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ মানুষ সেবা খাতে, ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ শিল্প খাতে ও ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কৃষি খাতে কাজ করছেন। ইতালিতে প্রধানত ফল, সবজি, আঙুর, আলু, সয়াবিন, আখ, জলপাইসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন হয়। এছাড়া প্রাণিসম্পদের মধ্যে মাংস, ডেইরি পণ্য ও মত্স্য উৎপাদন হয়।