তৈরি পোশাক খাতের যে রপ্তানি আয় দেখানো হয়, তার প্রায় অর্ধেকই চলে যায় কাঁচামাল আমদানি ও কারখানায় কর্মরত বিদেশিদের বেতন-ভাতার পেছনে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও লাগাতার কমছে পোশাকের দাম, এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখছেন তারা। কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় পোশাক খাত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ শিল্পের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। সেই লক্ষ্যেই সুবিধা কাঠামোও ঢেলে সাজানোর পরামর্শ তাদের। মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি যোগান দিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্পে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে পোশাক খাত। বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্নভাবে প্রণোদনাপ্রাপ্তি, কর সুবিধাসহ সরকারের নীতি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের যোগান দেয়া এই খাতটি। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে, পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ চলে যায় ব্যাক টু ব্যাক এলসি’র খরচ বা কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ব্যয় মেটাতে। বাকি টাকা থেকে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় কারখানার মিড লেভেলে কর্মরত বিদেশিদের বেতন-ভাতার পেছনে। এসব ব্যয় বাদ দিলে বাকি প্রায় ৫৫ শতাংশ যোগ হয় দেশের অর্থনীতিতে। সে হিসাবে গেল অর্থবছরে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ, শ্রমিকের বেতন-ভাতা দেয়াসহ কারখানা পরিচালনা ও ব্যবসা উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন উদ্যোক্তারা। বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, এখানে দুই শতাংশ ব্যবসা হয়। কোনো অর্ডার ক্যান্সেল হলে তাতে মালিকের ক্ষতি হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সময় এসেছে পোশাক খাতের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে সম্ভাবনার বিচারে অন্যখাতের বিকাশে কাজ করার। অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, রফতানিখাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। একটা খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ডাইভারসিফিকেশনে যেতে হবে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, গার্মেন্টস শিল্প অলরেডি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্প। এ শিল্পে চলমান সমস্যা সমাধানে নিজেদের কিছু উদ্যোগ নেয়া দরকার। তবে এক্ষেত্রে তারা বেশিরভাগই সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন। বিজিএমইএ’র তথ্য, গেল এপ্রিল-মে এই দুই মাসে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে সংগঠনটির সদস্যভুক্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ কারখানার।