করোনার প্রভাবে তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজার সংকুচিত হয়ে এসেছে। দীর্ঘ লকডাউনের কারণে বিক্রি কমেছে। ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত চাহিদা কমে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপে। উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ থাকায় অনেক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। সাধারণ ছুটির পর অনেক কারখানা আর নতুন করে উৎপাদনে ফিরতে পারছে না। এমন বাস্তবতায় অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের বাজেটে কয়েকটি উেস সাহসী নীতি সহায়তা আশা করছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।
উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশার মধ্যে রয়েছে বড় হারে নগদ সহায়তা। করোনা পরিস্থিতির কারণে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা চান তাঁরা। দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহারে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ এবং আমদানি করা কাঁচামালে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা চান তাঁরা। এই দুই খাতে চলতি অর্থবছরে নগদ সহায়তার হার যথাক্রমে ৪ ও ১ শতাংশ। মোট পোশাক রপ্তানিতে দেশীয় কাঁচামালে উৎপাদিত পণ্যের অবদান প্রায় ৫৫ শতাংশ। বাকি ৪৫ শতাংশ আসে আমদানি করা কাঁচামালে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি থেকে।
এ প্রসঙ্গে নিট পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতে উৎপাদন এবং ভোক্তা পর্যায়ে পোশাক ব্যবসা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলেও বড় হারে প্রণোদনা ছাড়া এখন আর টিকে থাকা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর বাজেটের আগে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যার কথাই মাথায় ছিল। কিন্তু এবার ব্যাপারটা বৈশ্বিক। বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে আসার কারণে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হবে। অথচ উৎপাদন খরচ কমছে না। বরং সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ায় পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েছে। এই বাস্তবতায় সরকারের এই নীতি সহায়তা ছাড়া অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।’ এ যুক্তিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় হারে নগদ সহায়তা চান তাঁরা।
বাজেটে নীতি সহায়তা প্রসঙ্গে কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের নীতি সহায়তার ফলে যেভাবে পোশাকশিল্প বিকাশের পথ সহজ হয়েছে, প্রায় ঠিক একই রকম পরিস্থিতি এখন। সরকারের নীতি সহায়তা ছাড়া শার্ট-প্যান্ট অর্থাৎ ওভেন ও নিট খাত এবং পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প হিসেবে প্রাথমিক বস্ত্র খাত, ডায়িং, ওয়াশিং, প্রিন্টিং, প্যাকেজিং ও অ্যকসেসরিজের অনেকগুলো খাত মুখ থুুবড়ে পড়বে। অর্থনীতিতে এসব খাতের অবদান অনেক।
বাজেট প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, করোনার বৈশ্বিক মহামারিতে পোশাকবাজার এখন অস্তিত্ব সংকটে। ব্যাপক হারে চাহিদা কমছে। আরো ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে এবারের বাজেটে পোশাক খাতের সহায়তায় সাহসী পদক্ষেপ প্রয়োজন। নগদ সহায়তার পাশাপাশি ডলারপ্রতি পাঁচ টাকা হারে অতিরিক্ত বিনিময় হার নির্ধারণ, ভর্তুকি মূল্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসেবা সরবরাহ করতে হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের পোশাকশিল্পের স্থানান্তর এবং নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বাণিজ্যিক সুদহারের অর্ধেক সুদে ১৫ বছর মেয়াদি ঋণ এবং উেস কর আগামী পাঁচ বছরের জন্য ২৫ পয়সা হারে নির্ধারণ, পোশাক খাতের ওপর সব ধরনের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার চান তাঁরা। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এসব কারখানার জন্য এক্সিট পলিসি বা প্রস্থান দিকনির্দেশনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল চান তাঁরা।