আগামী ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীনে রফতানি করা যাবে। এতদিন এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (আপটা) আওতায় বাংলাদেশ চীনে ৩ হাজার ৯৫ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছিল। কিন্তু তাতে তৈরি পোশাক না থাকায় সুফল পাওয়া যায়নি। ১৬ জুন আরও ৫ হাজার ১৬১টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে চীন, তাতে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের প্রধান রফতানিকৃত ১৭টি পণ্য আছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ অণুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব শরিফা খান যুগান্তরকে বলেন, এখন থেকে চীনে ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। যা চীনের মোট ট্যারিফ লাইনের ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আপটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে ৩ হাজারের বেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে তৈরি পোশাক না থাকায় তার সুফল পায়নি বাংলাদেশ। বহু আলাপ-আলোচনা, চিঠি চালাচালির পর তৈরি পোশাককে শুল্কমুক্ত সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করা গেছে। এফবিসিসিআই’র সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানির সুযোগ পাওয়া অনেক বড় অর্জন। এতে রফতানির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করছি। পাশাপাশি এ পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে এটা ভালো সংবাদ। এই মহামারীতে অন্য সব দেশের যেখানে পোশাক রফতানি নেতিবাচক, সেখানে চীনে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাংলাদেশের বেসিক আইটেমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে সেখানে। এখন নিজেদের অভ্যন্তরীণ জটিলতা কমিয়ে আনতে পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার বলা হয়, সরকারের অর্থনৈতিক কূটনীতির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সুবিধা দেয়ার অনুরোধ করে চীন সরকারকে চিঠি দেয়া হয়। এ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের স্টেট কাউন্সিলের ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি এ সুবিধা প্রদান করে নোটিশ জারি করে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তথ্য মতে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল এক বিলিয়ন ডলারের নিচে। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির দিকনির্দেশনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে চীনের সঙ্গে বিনিময়পত্র স্বাক্ষর করে। এছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে ভুটান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্তকরণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার মারকোসার জোটের দেশগুলো, পূর্ব ইউরোপের বাণিজ্য জোটের সঙ্গে এফটিএ আলোচনা চলছে। সর্বপ্রথম চীন ২০১০ সালের ১ জুলাই স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে। প্রাথমিকভাবে এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশসহ ৩৩টি স্বল্পোন্নত দেশ চীনের ৬০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু চীনের এ সুবিধা বাংলাদেশের। রফতানি সক্ষমতার অনুকূল কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতা আছে এমন অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য রফতানি সম্ভাবনাময় পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা। প্রদানের জন্য চীনকে অনুরোধ করে। বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীন লেটার অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষর করে। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর ১৬ জুন চীন বাংলাদেশকে শর্তহীনভাবে ৯৭ শতাংশ পণ্যে (৮,২৫৬টি পণ্য) শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে আদেশ জারি করে। এর ফলে চীনের বাজারে বাংলাদেশের সব সম্ভাবনাময় পণ্য শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে, যা ১ জুলাই কার্যকর হবে।