করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পোশাক কারখানার শ্রমিকের জীবন এবং শিল্পখাত রক্ষায় সব পোশাক কারখানা সাময়িকভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করার দাবি জানান বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি। কেনোনা পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোর অর্ডার বাতিল হওয়ায় প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি পোষাকখাত। তবে খুশির খবর এর মধ্যেই বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প রপ্তানির জন্য সুরক্ষামূলক মাস্ক, গ্লোভস এবং গাউন তৈরির অর্ডার পেয়ে এ শিল্পে প্রাণ ফিরে এসেছে। ঢাকার সামান্য উত্তরে শিল্প শহর বলে পরিচিত সাভারে গার্মেন্ট কারখানায় সপ্তাহে ৬ দিন আট ঘণ্টার শিফটে কাজ করছেন হাজার হাজার শ্রমিক। তারা তৈরি করছেন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বা পিপিই। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। কারখানার মেঝেতে হাজার হাজার শ্রমিকের চালানো সেলাই মেশিনের শব্দ। তার পাশে গাড়ি করে রাখা সাদা আর হালকা নীল রঙের গাউনের স্তূপ। জারা, কেলভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগারের মতো ব্র্যান্ডের মালিকদের পোশাকের বড় সরবরাহকারী বেক্সিমকো। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ নাভিদ হোসেন বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে আমরা সুযোগ দেখতে পেয়েছি।সঙ্গে সঙ্গে আমরা পিপিই তৈরি শুরু করেছি। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হ্যানস ব্র্যান্ডের কাছে ৬৫ লাখ মেডিকেল গাউন রপ্তানি করেছে বেক্সিমকো। এ বছরে তারা প্রায় ২৫ কোটি ডলারের সুরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করার আশা করছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি’কে তিনি বলেছেন, আমাদের ৪০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে এখন শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ পিপিই তৈরিতে নিয়োজিত। করোনাভাইরাস বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে। গত দুই দশকে চীনের পরেই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ। তারা পোশাক প্রস্তুত করে প্রাইমার্ক এবং এইচএন্ডএমের মতো ব্রান্ডের জন্য। করোনাভাইরাস মহামারির আগে, বাংলাদেশ বছরে রপ্তানি থেকে যে ৪০০০ কোটি ডলার আয় করতো তার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগের মতো আসতো এই খাত থেকে। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছিল ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের। এর মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামের দরিদ্র নারী। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যখন লক-ডাউনের কারণে সবকিছুর পতন শুরু হলো, তখন বাংলাদেশের প্রায় ৪৫০০ পোশাক প্রস্তুতকারকদের শিপমেন্ট এপ্রিলে আটকে যায় শতকরা ৮৪ ভাগ। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, আগেভাগেই প্রায় ৩২ লাখ ডলারের অর্ডার বাতিল করা হয়েছিল অথবা স্থগিত করা হয়। এমন অবস্থায় চুক্তিতে লোকসান ও দেশের ভিতরে লক-ডাউনের কারণে বেশির ভাগ কারখানাই শত শত শ্রমিককে বরখাস্ত করে। ফলে দেখা দেয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। এক্ষেত্রে কিছু অর্ডারে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু বিজিএমএর মুখপাত্র খান মনিরুল আলম শুভ এএফপি’কে বলেছেন, গত বছরে গার্মেন্ট খাত যে পরিমাণ উপার্জন করেছিল, নতুন অর্ডারের পরিমাণ তার তুলনায় অনেক কম। জুনে আমাদের কারখানার সক্ষমতার শতকরা মাত্র ৫৫ ভাগ সচল।