তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) শনিবার জানিয়েছে, সংগঠনটির সভাপতি ড. রুবানা হক জুন থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি এবং সংগঠনটির পক্ষ থেকেও এমন ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সম্প্রতি ওয়েবিনারে বিজিএমইএর সভাপতির দেয়া একটি বক্তব্য খণ্ডিত আকারে ছড়িয়ে পড়ায় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ বলছে, বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়নি। তবের বিজিএমইএ সভাপতির ওই বক্তব্যে আমলে নিয়ে বাংলাদেশ কনফেডারেশন অব লেবার (বিসিএল) শুক্রবার আপত্তি জানিয়ে সম্ভাব্য কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি এমন (দায়িত্বজ্ঞানহীন) বক্তব্য দিয়েছেন যে তাতে মনে হয়ে বিষয়টি অনিবার্য এবং স্বাভাবিকভাবেই এমনটি করা হবে। এছাড়া সংগঠন হিসেবে এ ধরনের ঘোষণা দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই বলেও দাবি করে বিজিএমই। বিজিএমইএ পোশাক খাতে কর্মসংস্থান হ্রাস এবং সম্ভাব্য শ্রমিক ছাঁটাই বিষয়ে তার গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মাত্র বলে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মেজর অব. মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজিএমইএ বলছে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পোশাক শিল্পে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৪ শতাংশ, যা এ শিল্পে গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। গত ১ মে থেকে ২০ মের সময়ে মধ্যে শিল্পে প্রবৃদ্ধি ৫৫.৭ শতাংশ ঋণাত্মক হয়েছে, বলছে বিজিএমইএ। আর চলতি বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেও অধিক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দাবি, চলমান পরিস্থিতিতে প্রকৃতপক্ষে, কোনও কারখানাই সামর্থ্যেরে শতভাগ ব্যবহার করতে পারছে না। ৩৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা সচল রেখেছে, এমন ঘটনাও আছে। বড় কারখানাগুলোও ৮০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। বিজিএমইএর মতে, চলতি জুনে পোশাক কারখানাগুলো গড়ে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতা ব্যবহার করে কোনও রকমে উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখছে। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র গত ২ মাসেই বিজিএমইএয়ের সদস্যভুক্ত ১৯২৬টি কারখানার মধ্যে ৩৪৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ অস্থা চলতে থাকলে বাকি কারখানাগুলো হয় একে একে বন্ধ হয়ে যাবে অথবা কম ক্যাপাসিটিতে কাজ করে যাচ্ছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজিএমইএ আশা করছে, যদি কোনো কারখানার কর্মচারীদের ছাঁটাইয় করতে বাধ্য হলে মালিক ও শ্রমিক উভয়ই শ্রম আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবেন। আন্তজার্তিক সংস্থার ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বের পোশাক বাজারে সেলস রেভিনিউ ৩০ শতাংশ কমবে। এর ফলে, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পাবে। বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। পোশাক রপ্তানির করে বাংলাদেশ প্রায় ৫০ বিলয়ন মার্কিন ডলার উপার্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। যা এখন প্রতিবছর ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।বাংলাদেশ সরকার তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫৮৮ মিলিয়ন ডলার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আর এ খাতে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে যার বেশিরভাগ নারী।