রোজার ঈদের আগে-পরে সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়াতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের আসন্ন কোরবানির ঈদে গ্রামের বাড়ি না যেতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে এই খাতের লাখ লাখ শ্রমিক ছুটি পেয়ে দল বেঁধে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলে তাদের ফেরানো কঠিন বলে মনে করছে শিল্প পুলিশ। তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শ্রমঘন এ শিল্পের শ্রমিকরা যেন ঈদের তিনদিন ছুটি পেয়েই গ্রামের বাড়িমুখো না হয় সে জন্য পোশাক মালিকদেরও সতর্ক থাকতে বলেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। সম্প্রতি গার্মেন্টস মালিক এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর এক বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্প পুলিশ) ফরহাদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শ্রমিকরা যাতে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে না যায় সে বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। তবে যদি লাখ লাখ শ্রমিক ছুটি পেয়ে বাড়ির পথে রওনা দেন সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’ এবার কোরবানির ঈদ হবে ১ আগস্ট। সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে পোশাক শ্রমিকদের ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন ছুটি থাকবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘সরকারি ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে শ্রমিকদের ঈদের ছুটি তিন দিন। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরকে যার যার কর্মস্থল এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।’ বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা আমরা মেনে চলবো। শ্রমিকদের প্রতি আহবান থাকবে তারাও যেন নির্দেশনা মেনে গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে কর্মস্থল এলাকায় থাকেন।’ শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া হয়ে যাবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের জুলাই মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য বিশেষ প্যাকেজ থেকে ঋণ দেওয়া হবে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে। আর সরকার পোশাক শিল্পের জন্য যে প্রণোদনা দিয়েছে ব্যাংকগুলো যেন তা সঠিকভাবে দেয়।’ ঈদের আগে পরের পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে শ্রমিকদের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্প পুলিশ) ফরহাদ হোসেন। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা, গাজীপুরে এবং নারয়ণগঞ্জে লাখ-লাখ শ্রমিক কাজ করে। আমাদের ক্যাপাসিটি অনুয়ায়ী সরকারের যে নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো মালিক ও শ্রমিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা সমন্বয় করছি। শ্রমিকদের বোঝাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এরপরও যদি লাখো শ্রমিক বাড়ির পথ ধরে তখন সেটা নিয়ন্ত্রণে থাকে না।’ ঈদের ছুটিতে শ্রমিকরা গ্রামের বাড়ি রওনা দিলে কি ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে জানতে চাইলে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টা হলো মহামারি যখন চলমান তখন লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করাই প্রথম শর্ত। সব কার্যক্রমই হওয়া উচিত মহামারি এবং মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যসুরক্ষার ওপর ভিত্তি করে।’ গত ঈদেও বাড়ি না যাওয়ার নির্দেশনা ছিল তবে তেমনভাবে মানা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে যেভাবে পেরেছে গ্রামের বাড়ি গেছে। পথেঘাটে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এবারও নির্দেশনা না মানার বিষয়ে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তবে আমার পরামর্শ থাকবে ঈদের ছুটিতে সবাই যেন যার যার বর্তমান অবস্থানেই থাকেন।’ যা বলছে শ্রমিক নেতারা: গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সহিদুর ইসলাম সবুজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, করোনার বিষয়টা বিবেচনায় নিয়ে আমরা শ্রমিকদের আহবান জানিয়েছি তারা যেন ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে না যায়। সরকারের নির্দেশনা যেন মেলে চলে। আমরা মালিকদেরও আহবান জানিয়েছি তারা যেন শ্রমিকদের ঈদের বেতন-বোনাস সঠিকভাবে দিয়ে দেন। সবুজ বলেন, ‘শ্রমিকদের আমরা বলি স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মস্থলের কাছে থাকুক, দূরে না যাক। সেটা আমরা বলি। তবে সেটা ঈদের সময় অনেকেই শোনে না। আবার অনেকে টাকা-পয়সা পাবে না তারা ঠিকমতো বাড়িতে যেতে পারবে না। কিন্তু যারা টাকা-পয়সা পাবে তারা কিন্তু ঈদে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করে।’ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শ্রমিকদের বলেছি তারা যেন কর্মস্থলে থাকেন, গ্রামের বাড়িতে না যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো পোশাক শ্রমিকরা যখন দেখবে অন্য পেশার লোকজন ছুটি পেয়ে বাড়ি যাচ্ছে, তখন তারাও হয়তো বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করবে। আর এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের এখানে কী করার আছে।’