বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের কারণে সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা খেলেও চলতি অর্থবছরেও (২০২০-২১) সরকার উচ্চাভিলাষী রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করছে। সম্ভাব্য এই লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সূত্র জানায়, সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে দেশের পণ্য রপ্তানিতে আয় হয় তিন হাজার ৩৬৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ শতাংশের বেশি। যা অনেকটা কাল্পনিক লক্ষ্যমাত্রা বলে মনে করেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আজ এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তবে খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই আয় অর্জন সম্ভব। এ জন্য সরকারের নীতি সহায়তা জরুরি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে সরকারের আরো নজরদারি এবং করোনা পরীক্ষা আরো বাড়ানো জরুরি। এ ছাড়া ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে যেন কেউ দেশের বাইরে না যায়। এরই মধ্যে ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের দেওয়া প্রণোদনা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তাঁরা। তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রপ্তানির এই প্রাক্কলন যখন করা হয়; ওই সময় আমরা আশা করেছিলাম আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ কভিড-১৯-এর প্রভাব থেকে বের হয়ে আসবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এটা আরো দীর্ঘায়িত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আশা বছর না গড়ালে চীনবিমুখ ক্রেতারা বাংলাদেশ পণ্যের ক্রয়াদেশ বাড়াবে। এর ফলে এমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও অনেকটা কাছাকাছি যাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’ তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে সরকার কিভাবে কভিড-১৯ মোকাবেলা করবে। এ জন্য টেস্ট বাড়াতে হবে। এ ধরনের থোক করোনা পরীক্ষা করে বিশ্ববাজারে দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’ পারভেজ বলেন, করোনার কারণে দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। এসব আদেশ নিতে শুরু করায় উদ্যোক্তা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কিছু কিছু নিচ্ছেন। আগামীতে এসব নেবেন বলে ক্রেতারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁরা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় চান। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে রপ্তানি কম হয়েছে এটা এমনিতেই কম হতো। তবে করোনার জন্য কিছুটা বেশি ক্ষতি হয়েছে। কেননা গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের রপ্তানি আয়ে ৬ শতাংশের বেশি আয় কম হয়েছে। তবে এটা বেশির ভাগ নির্ভর করছে ইউরোপ ঘুরে দাঁড়ানোর ওপর। এটা কতটা সম্ভব সময়ই বলে দেবে। সরকারের নীতি সহায়তার পরিবর্তন না হলে কিছুই করার থাকবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দেশ প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে এবার সস্তা শ্রমিক দিয়ে আর উত্তরণ সম্ভব নয়। শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে হবে। পোশাক কারখানাগুলোতে যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন করতে হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে।’ পোশাক খাতের শ্রমিকদের আরো তিন মাসের মজুরি সহযোগিতা চেয়ে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াতে শ্রমিকদের ধরে রাখতে হবে। এ জন্য আগামী তিন মাসের ঋণ সহায়তা দরকার। এটা হতে পারে স্বল্প সুদে ঋণ।’ এ ছাড়া সরকারের দেওয়া প্রণোদনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তিনি।