দেশের তৈরি পোশাক খাতে চলতি বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে—এই তিন মাসে এই খাতে যে ভয়াবহ খরা চলছিল, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা কাটিয়ে উঠেছেন মালিক-শ্রমিকরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ক্রেতারাও ফিরে আসছেন। ফলে বেড়েছে বিক্রি ও রপ্তানি আয়। রাজধানীর কয়েকটি কারখানার ভেতর-বাইরের চিত্র পর্যবেক্ষণ করে পোশাক খাতের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে, পোশক খাতের সাম্প্রতিক কর্মতৎপরতার তথ্য উঠে এসেছে ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং’ (সানেম) ও ‘মাইক্রো ফাইন্যান্স অপরচুনিটিজ’ (এমএফও)-এর যৌথ জরিপেও। এই জরিপে দেখা গেছে, জুলাই মাসে পোশাকখাতে কর্মরত বা উপার্জনকারীদের ৯৬ শতাংশই কাজে যোগ দিয়েছেন। যা জুনে ছিল ৯৪ শতাংশ। এ সময়ে গড়ে তাদের ২৩৯ ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে। যা জুনে ছিল ২৩৪ ঘণ্টা। জুলাইয়ে শ্রমিকের গড় আয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ৯ হাজার টাকা। পোশাক খাতের সাম্প্রতিক ক্রমোন্নতির আরও প্রমাণ পাওয়া যায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তৈরি রপ্তানি আয়ের চিত্রেও। এতেও দেখা গেছে, মাসওয়ারি রপ্তানি আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। এপ্রিলে পোশাক রফতানি হয়েছে মাত্র ৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরের মাসে (মে) রপ্তানি হয়েছে ১২৩ কোটি ডলারের। জুনে বেড়ে ২২৫ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ে আরও বেড়ে ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে পৌঁছে। চলতি আগস্ট মাসের ১৫ দিনেই ১৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের আগস্ট মাসের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতোই সব কর্মযজ্ঞ চলছে। এতে রপ্তানি পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে বাস্তবচিত্র জানতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘সরকারের নীতি সহায়তায় আমরা মাত্র তিন মাসেই এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।’ পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘শিল্প মালিকদের ধৈর্য, সাহসিকতা ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার ফলে এই শিল্প আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। ক্রেতারা নতুন অর্ডার নিয়ে আসছেন। অনেকেই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বুকিং অর্ডার পেয়ে গেছেন।’ তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর পরিচালক মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘অনেক বড় ব্র্যান্ড স্থগিত ও বাতিল করা ক্রয় আদেশের পণ্য আবার নিতে শুরু করেছে।’ ক্রেতাদের এই রেসপন্স বজায় থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই পোশাক খাত আগের অবস্থানে ফিরে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।