করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে শুরু হয় মন্দার ঢেউ। সে ঢেউ আছড়ে পড়ে দেশের তৈরি পোশাক খাতেও। ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার জের ধরে বন্ধ হয়ে যায় অনেক কারখানা। ব্যয় কমাতে অনেক কারখানায় শুরু হয় শ্রমিক ছাঁটাই। অন্যদিকে এই করোনাকালের মধ্যেই ‘সবকিছু স্বাভাবিক’ হয়ে এলেও বন্ধ হয়নি শ্রমিক ছাঁটাই। বরং গণহারে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। শ্রমিক নেতাদের দাবি, করোনাকালে লক্ষাধিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। পরিস্থিতি বদলাতে থাকলে তাদের অনেকেই অন্য কোনো কারখানায় যোগ দিয়েছেন। তবে ইন্ডাস্ট্রি পুলিশ বলছে, করোনাকালে মোট ১৮৭টি কারখানায় ৩১ হাজার ৬৯৮ জন শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। সম্প্রতি উদ্বেগজনকহারে (গণহারে) বাড়ছে ছাঁটাই, এমন দাবি শ্রমিক নেতাদের। তারা বলছেন, শুধু চলতি মাসে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। মালিক পক্ষ বলছে, ছাঁটাই নয়, শ্রমিক সংকটে আছে পোশাক কারখানাগুলো। প্রতিটি পোশাক কারখানায় মূল ফটকে ঝোলানো হচ্ছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। শ্রমিক নেতাদের দাবি, গত ঈদের আগে থেকে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করে মালিক পক্ষ। কোনো রকম সু্বিধা না দিয়েই এ ছাঁটাই চলতে থাকে, যার সংখা লক্ষাধিক। করোনায় ছাঁটাই হলে কোনো আন্দোলন হবে না, এমন সুযোগ নিচ্ছেন মালিকপক্ষ। শুধু চলতি মাসে বিভিন্ন কারখানা মালিক ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন। ন্যায্য ক্ষতিপূরণও পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। তবে তাদের দাবির সঙ্গে মিল নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যের। শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বিজিএমইএর ১১৯ কারখানায় ৩০ হাজার ২৭৯ জন, বিকেএমইএর ২২ কারখানায় ২ হাজার ৪৬৭ জন, বিটিএমএর ৫ কারখানায় ২৬৪ জন, বেপজার ২১ কারখানায় ৬ হাজার ৩১৩ জন এবং অন্যান্য ২০ কারখানায় আরও ২ হাজার ৪২৫ জন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হন। এর আগে গত সোমবার শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর প্রতি অনুরোধ জানান। শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশু বলেন, করেনাকালে লক্ষাধিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। আর চলতি মাসে (আগস্ট) এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে, যাদের কোনো ন্যায্য পাওনা দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন এ অঙ্কটা ভারি হচ্ছে। করোনাকালে শ্রমিক ছাঁটাই হলে কোনো আন্দোলন হবে না, এমন সুযোগ নিচ্ছেন মালিকপক্ষ। মালিক পক্ষ শ্রম বান্ধব হলে পোশাক খাতের চিত্র পাল্টে যেতো। জানতে চাইলে বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেন, চলতি মাসে ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন, এটা তথ্যভিত্তিক না। তবে কোনো কারখানা দূরে স্থানান্তরের সময় সে কারখানার শ্রমিক চাকরি ছেড়ে অন্যটিতে যোগ দিতে পারেন। এটাকে ছাঁটাই বলা যাবে না, এতে শ্রমিক বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে যান। বরং এখন শ্রমিক সংকটে আছে কারখানাগুলো, সেখানে ছাঁটাই হবে কেন? তিনি বলেন, এখন আমাদের গ্রোথ ভালো। করোনাকালে যে আশঙ্কা করছিলাম তার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি। সে সময় কিছু ছাঁটাই হয়েছে, অনেক ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার ভালো সময় এসেছে। প্রায় প্রতিটি কারখানায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে।