গার্মেন্ট কারখানার গেটগুলোতে আবারও চাকরিপ্রার্থী শ্রমিকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। কারখানাগুলো শ্রমিক নিয়োগ শুরু করেছে। করোনার কারণে শ্রমিক ছাঁটাই ও স্বেচ্ছায় কারখানা ত্যাগ করার কারণে কারখানাতে শ্রমিকের সংখ্যা কমে যায়। পরবর্তী সময়ে কার্যাদেশ বৃদ্ধি ও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই শঙ্কামুক্ত হয়ে কারখানা চালু হলে আবার শ্রমিক নিয়োগ শুরু হয়। আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়। তৈরি পোশাক শিল্প এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য মিলেছে। ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে। প্রথমে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ সমস্যায় পড়ে। পরে মার্চ থেকে দেশে করোনা মহামারি শুরুর প্রেক্ষাপটে পুরো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানি। বন্ধ হতে থাকে একের পর এক কার্যাদেশ। এর প্রভাবে বন্ধ হতে থাকে কারখানা। আংশিকভাবেও কারখানা বন্ধ হতে থাকে। ফলে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়।অনেক শ্রমিক স্বেচ্ছায়ও চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। ইনিস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিল্স) জরিপ মতে এ সময় এক হাজার ৯১৫টি কারখানা লে-অফ ও বন্ধ হয়ে যায়। চাকরি হারায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ জন শ্রমিক। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিলস এর মতে, বকেয়া বেতন-বোনাস, শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন ও কারখানা বন্ধের ইস্যুতে তৈরি পোশাক শিল্পে আন্দোলনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে, করোনাকালেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বর্তমান সময়ের এ কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নানা বিপর্যয়ের মধ্যে বেড়েছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের হার। ৮৭টি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে সাড়ে ২৬ হাজার ও অনেক ক্ষেত্রেই আইন না মেনে ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে। শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। করোনাকালীন সংকটে এ খাতে বেকার হয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ শ্রমিক। করোনাকালীন সময়ের যে সব শ্রমিক গ্রামে চলে যায় তাদের বড় একটি অংশ গ্রামের কৃষি বা অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু হলে তাদেরই একটি অংশ আবার কাজের সন্ধানে ঢাকা আসা শুরু করে। বিভিন্ন কারখানাতে থেকে চাকরি হারিয়ে শিল্প এলাকাগুলোতে যে সব শ্রমিক অবস্থান করছিলেন তারাও চাকরির সন্ধানে নামে। তৈরি পোশাক কারখানায় ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এ সব শ্রমিক চাকরি পাচ্ছেনও। মিরপুরের একটি তৈরি পোশাক কারখানার গেটে অপেক্ষমাণ আব্দুস আলী নামে একজন শ্রমিক এই প্রতিবেদককে বলেন, এই কারখানা লোক নেবে। এই কারখানাতে চাকরি করে এমন একজন বন্ধু খবর দিয়েছে তাই এসেছি। সুপারভাইজার গেটে অপেক্ষা করতে বলেছে, আশা করছি চাকরি হবে। আব্দুস আলী জানান, তিনি সাভারের লে-অফ হওয়া একটি কারখানার শ্রমিক ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারখানাটিতে চারজন অপারেটর ও দুইজন মেশিন হেলপার নেবে। যা করোনাকালীন সময়ে খালি হয়। শ্রমিক নিয়োগ শুরু হয়েছে- এমন খবর পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, গাজীপুর ও সাভারে। এ সব কারখানা তুলনামূলক কম বেতনের শ্রমিক দিচ্ছে। বিষয়টি তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের অতি মুনাফামুখি মানসিকতার প্রকাশ বলে মনে করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমিন। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি সুযোগ নিয়ে উদ্যোক্তারা তুলনামূলক পুরাতন ও বেশি বেতন এবং সার্ভিস বেনিফিট উপযোগী হতে যাচ্ছে এমন শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। যে সব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে সেব সব কারখানায় এখনো শ্রমিকদেরও ছাঁটাই চলছে। অন্যদিকে যেহেতু তৈরি পোশাক ক্রয়াদেশ বাড়ছে, সে সব কার্যাদেশ সম্পন্ন করে রপ্তানি করতে হবে। শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে। এজন্য কম বেতনের শ্রমিক নিয়োগ করছে। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আ. রহিম ফিরোজ খোলা কাগজকে বলেন, তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাজও বাড়ছে। বাড়তি কাজের কারণে প্রয়োজনীয় শ্রমিক নিয়োগও শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিকের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। তবে করোনার দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাবে বিশ^স্বাস্থ্য যে আভাস দিয়েছে এটা যদি সত্যি সত্যি পশ্চিমা দেশগুলোতে শুরু হয় তাহলে আরও ঝুঁকি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।