- উদ্যোক্তারা বলছেন, মহামারির কারণে সুরক্ষাসামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। ভালো সম্ভাবনা থাকায় অনেকেই বিনিয়োগ করেছেন।
- তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুলাই—এই পাঁচ মাসে ২ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের মাস্ক রপ্তানি হয়েছে।
- বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, গত জুনে ১ কোটি ৯ লাখ মাস্ক রপ্তানি হয়েছে। পরের মাসে সেটি বেড়ে ১ কোটি ২৪ লাখে গিয়ে দাঁড়ায়।
করোনাভাইরাস অনেক ব্যবসা-বাণিজ্যের খোলনলচে বদলে দিয়েছে। অনেক পণ্যের চাহিদা কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর চাহিদা। মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় পিপিই গাউন ও মাস্কে নতুন সম্ভাবনা দেখছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। গাউনে দু–একটি প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্যরা ভালো সাড়া না পেলেও মাস্কের রপ্তানি বেশ বেড়েছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, মহামারির কারণে সুরক্ষাসামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। ভালো সম্ভাবনা থাকায় অনেকেই বিনিয়োগ করেছেন। নতুন বিনিয়োগও আসছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে সুরক্ষাসামগ্রী রপ্তানির আকার বাড়তে পারে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুলাই—এই পাঁচ মাসে ২ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের মাস্ক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৭ লাখ ডলারের মাস্ক। তাতে চলতি বছর মার্চ থেকে জুলাইয়ে মাস্কের রপ্তানি বেড়েছে ৮৮৩ শতাংশ।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, গত জুনে ১ কোটি ৯ লাখ মাস্ক রপ্তানি হয়েছে। পরের মাসে সেটি বেড়ে ১ কোটি ২৪ লাখে গিয়ে দাঁড়ায়। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে মাস্কের রপ্তানি বেড়েছে ১ হাজার ১১৭ শতাংশ। তবে পিপিই গাউন রপ্তানির তথ্য সংগঠনটির কাছে আপাতত নেই।বিজ্ঞাপন
ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদন ও রপ্তানিতে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে বেক্সিমকো গ্রুপ। গত মে মাসে ৬৫ লাখ পিস পিপিই গাউনের প্রথম চালানটি এমিরেটসের একটি উড়োজাহাজে পাঠায় তারা। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল ইমার্জেন্সি এজেন্সির (এফইএমএ) জন্য দেশটির পোশাকের ব্র্যান্ড হেইনস এই পিপিই গাউন বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাজারেও সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করছে।
জানা যায়, বেক্সিমকোর পিপিই ডিভিশন সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনের জন্য ২০ একর জমির ওপর বিশ্বমানের পিপিই পার্ক স্থাপন করছে। সেখানে মাসে দেড় কোটি পিস পিপিই উৎপাদন করার সক্ষমতা থাকবে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার গবেষণা ও কনসালটিং কোম্পানি গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, গত বছর বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর বাজার ছিল ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের। ২০২৭ সালে সেটি বেড়ে ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।
বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ডিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ নাভিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছর প্রায় ২৫ কোটি ডলারের সুরক্ষাসামগ্রী রপ্তানি হবে। আগামী বছর সেটি বেড়ে ৫০ কোটি ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সুরক্ষাসামগ্রীতে সারা বিশ্বে ‘বেক্সিমকো হেলথ’ ব্র্যান্ডকে প্রথম সারিতে নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার গবেষণা ও কনসালটিং কোম্পানি গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, গত বছর বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর বাজার ছিল ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের। ২০২৭ সালে সেটি বেড়ে ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে। অবশ্য ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর বাজার বিশ্লেষণ প্রতিবেদনটি তারা গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করেছে। গত সাত মাসে করোনা পরিস্থিতি অনেক হিসাব–নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। তবে শুরুতে পিপিই গাউনের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও বর্তমানে কিছুটা কম। অন্যদিকে লকডাউন তুলে নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্কের চাহিদা বেড়েছে।বিজ্ঞাপন
পোশাক খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ঊর্মি গ্রুপ সুরক্ষা পোশাক উৎপাদনের জন্য ৫ লাখ মার্কিন ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে। চীনা কনসালট্যান্টের সহায়তা নিয়ে তিনটি নকশার পিপিই গাউন প্রস্তুত করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) সনদও পেয়েছে তারা।
জানতে চাইলে ঊর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ পিস মাস্ক রপ্তানি করেছি আমরা। অন্যদিকে পিপিই গাউনের জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, দেশের বাজারে অ্যান্টিভাইরাল মাস্ক বাজারজাত করে ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
আদমজী ইপিজেডের কারখানার উৎপাদিত সুরক্ষাসামগ্রী ও খেলনা রপ্তানি হবে। বছরে ৮৫০ মেট্রিক টন সুরক্ষাসামগ্রী ও ৪ হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন খেলনা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
প্রাণ গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল
ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে নতুন বিনিয়োগ করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বঙ্গ প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড আদমজী ইপিজেডে আগামী এক বছরের মধ্যে সুরক্ষাসামগ্রী ও খেলনা উৎপাদন শুরু করবে।
সুরক্ষাসামগ্রীর মধ্যে থাকবে সার্জিক্যাল মাস্ক, ফেস মাস্ক কেএন ৯৫ ও এন ৯৫, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, শু কাভার, মেডিকেল গাউন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি। এতে ১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তাতে ১ হাজার ৯০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, আদমজী ইপিজেডের কারখানার উৎপাদিত সুরক্ষাসামগ্রী ও খেলনা রপ্তানি হবে। বছরে ৮৫০ মেট্রিক টন সুরক্ষাসামগ্রী ও ৪ হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন খেলনা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। সুরক্ষাসামগ্রীতে বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে পিপিই ও মাস্কের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারই আমাদের মূল টার্গেট।বিজ্ঞাপন
পোশাক ও বস্ত্র খাতের আরেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লিমিটেড। পিপিই গাউন ও মাস্ক তৈরির জন্য দুই ধরনের করোনাপ্রতিরোধী বিশেষ কাপড় উৎপাদন করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ৫ লাখ পিস ফেস মাস্ক রপ্তানি করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বিদেশে বাংলাদেশের ১৫টি দূতাবাসে ভাইরাসপ্রতিরোধী কাপড় দিয়ে তৈরি পিপিই গাউন ও মাস্কের নমুনা পাঠিয়েছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের। ইতিমধ্যে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও চীনের উদ্যোক্তারা এসব পণ্য আমদানি করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
জানতে চাইলে জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার অনল রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, সুরক্ষাসামগ্রীর বাজার অনেক বড়। সেটি ধরতে আমরা কয়েক মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করছি। সামনের মাস থেকে সেই পরিশ্রমের ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। মানে, বড় আকারে রপ্তানির ক্রয়াদেশ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অবশ্য সুরক্ষা বাজার কতটুকু ধরা যাবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ও রয়েছে। জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. মশিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে পিপিই ও মাস্ক নিয়ে অনেকে অনেক সম্ভাবনার কথা বলেছেন। বিভিন্ন গ্রেডের পিপিই উৎপাদনের জন্য আমাদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সার্টিফিকেট নিয়েছে। তবে বর্তমানে পিপিই নিয়ে হইচই তেমন একটা হচ্ছে না। ক্রেতারাও তাঁদের নিয়মিত উৎস থেকেই পিপিই নিচ্ছেন। ফলে পিপিইর খুব বেশি ক্রয়াদেশ পায়নি বাংলাদেশ। তবে বিপুল পরিমাণ মাস্ক রপ্তানি হচ্ছে।