একটা আশা জাগানিয়া সংবাদ প্রকাশিত হলো দৈনিক আজাদীতে গত ১১ সেপ্টেম্বর। ‘আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গার্মেন্টস খাত, আসছে অর্ডার চট্টগ্রামে কাজ চলছে ২৯৪ টি কারখানায়’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়, করোনার দুর্দিন কাটিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গার্মেন্টস খাত। ইউরোপ- আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে অর্ডার। চট্টগ্রামের ২৯৪টি গার্মেন্টসে এসব অর্ডারের ভিত্তিতে কাজ চলছে পুরোদমে। ফলে গত অর্থবছরে মুখ থুবড়ে পড়া এই খাতে গতিশীলতা ফিরছে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের গার্মেন্টসগুলো ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা দেশে পোশাক রপ্তানি করলেও কাঁচামাল আমদানি করে চীন থেকে। ফলে চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব এদেশের গার্মেন্টস খাতকে বড় রকমের বেকায়দায় ফেলে। পরবর্তীতে চীনের পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে দেশের গার্মেন্টস মালিকরা কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি শুরু করেন। অপরদিকে ইউরোপ আমেরিকার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ‘নিউ নরম্যালে’ অভ্যস্ত হতে শুরু করে। ফলে দেশের গার্মেন্টসগুলোতে আবার অর্ডার আসতে শুরু করে। স্থগিত হয়ে যাওয়া অর্ডারগুলো পুনরায় ডেলিভারি দিতে বলা হয়। আবার নতুন নতুন অর্ডারও দিতে থাকে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সামপ্রতিক সময়ে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অর্ডার এসেছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী নেতা জানান, করোনাকালে এত অর্ডার আসবে আশা করিনি। স্থগিত কিংবা বাতিল হয়ে যাওয়া অর্ডারগুলোও আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। অবশ্য কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডিসকাউন্ট চাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৮০ ভাগেরও বেশি অর্ডার ফিরে এসেছে। এসব অর্ডারের ভিত্তিতে কাজ করতে গিয়ে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস খাতে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সরাসরি আঘাত হেনেছে দেশের তৈরি পোশাক খাতে। একের পর এক বাতিল হয়েছে ক্রয়াদেশ। কাজ না থাকায় বন্ধ হয়েছে অনেক পোশাক কারখানা। যেসব প্রতিষ্ঠান চালু ছিল, সেখানে কাজ অর্ধেকে নেমে এসেছিল। এসব কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে রফতানি।
অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্প একটি সংকটময় মুহূর্ত বা চ্যালেঞ্জের মুখে উপনীত। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাতটির বিকাশেরও অপরিমেয় সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, অন্যান্য তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের পক্ষ থেকে আমাদের মারাত্মক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ব্যবসায়ের সফলতা ধরে রাখার জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক পটভূমি তৈরি অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। তাই তৈরি পোশাক খাতটিকে বর্তমান ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জগুলোকে দ্রুত জয় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত রূপান্তরের মাধ্যমে পরিচালনা দক্ষতা বাড়িয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে তারা তাদের ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি অর্জন করতে পারে। প্রযুক্তিগত রূপান্তর এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে পোশাক খাত গ্রাহকের প্রত্যাশাকে- সঠিক পণ্য, সঠিক মান, সঠিক পরিমাণ, সঠিক সময়-চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে। চট্টগ্রামের পোশাক খাতে যে সব সংকট বিরাজমান, তা থেকে উত্তরণের পথ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে খুঁজে বের করতে হবে। সেটা করা সম্ভব না হলে পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে মোড় নেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। মামুন রশীদ পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেছেন। বলেছেন, তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ব্যবসায়িক রূপান্তরের ক্ষেত্রে নতুন পন্থার উদ্ভাবন ঘটাতে হবে। অন্যান্য দেশের পোশাকশিল্প, যারা এমনকি করোনাকালেও দ্রুততার সঙ্গে তাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কার্যক্রম বৃদ্ধি করে চলেছে, তাদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকতে হলে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অবশ্যই নিজেদের নতুন করে তৈরি করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন হলো দুটি প্রধান শক্তি, যা বাংলাদেশের পোশাক খাতের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রযুক্তিগত সমাধান বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে পোশাকশিল্পও। উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, উৎপাদনের অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা, সরবরাহের ক্ষেত্রে বিলম্ব দূর, সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস এবং গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী সংস্কৃতি তৈরির চেষ্টায় নিয়োজিত, যাতে তারা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ মানের পণ্য সরবরাহে সক্ষম হয়। পোশাক খাতের অগ্রগতিতে সুুচিন্তিত ও সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।