তৈরি পোশাক রপ্তানির হিসাব মিলছে না। সদ্য শেষ হওয়া আগস্ট মাসে ২৪৬ কোটি নাকি ৩৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তবে পোশাকের রপ্তানির হিসাব না মিললেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসে দেশের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের বরাত দিয়ে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গত মঙ্গলবার জানিয়েছিল, গত আগস্টে ৩৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এটি গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। গত জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩২৪ কোটি ডলারের পোশাক। তবে আগস্ট মাসে বিজিএমইএর দেওয়া হিসাবের চেয়ে ৯০ কোটি ডলারের পোশাক কম রপ্তানি হয়েছে বলে জানিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টে ২৯৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৪৬ কোটি ডলারের, যা গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। যদিও ইপিবি এই তথ্য গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। তাই হিসাবের গরমিলটি সত্যিকারের নাকি কোনো নিতান্তই গণনার ভুল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পোশাক রপ্তানির এই গোলমেলে তথ্যের বিষয়ে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘এনবিআরের প্রাথমিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ৩৩৬ কোটি ডলারের রপ্তানির তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এনবিআর ও ইপিবির তথ্যে ৯০ কোটি ডলারের ব্যবধান অযৌক্তিক। সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে কার তথ্য ঠিক, সেটি নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত।’ জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য রপ্তানিতে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পোশাক রপ্তানির তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এনবিআর থেকে তথ্য নিয়ে আমরা আমাদের মতো পণ্য রপ্তানির পরিসংখ্যান তৈরি করি। এখানে প্রাথমিক তথ্যের জোগানদাতা এনবিআর।’ চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাথমিক হিসাবে, গত আগস্টে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৮৮টি। জুলাইয়ে সংখ্যাটি ছিল ৭৪ হাজার ৮৪৯। গত বছরের আগস্টে ৬২ হাজার রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন হয়েছিল। এই হিসাব অবশ্য বন্দর, কমলাপুর ডিপো ও আইসিটি মিলে করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়ে যায়। এদিকে দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে মার্চে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর মাসখানেক কারখানা বন্ধ থাকে। তাতে এপ্রিলে পোশাক রপ্তানি তলানিতে নেমে গিয়েছিল। ওই মাসে ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। মে মাসে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ডলারে। জুনে সেটি আরও বেড়ে ২২৫ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। করোনায় তিন মাসে বড় ধাক্কা খাওয়ার কারণে গত জুনে শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬১৮ কোটি ডলার কম। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তখন প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ১১ শতাংশ। পোশাক রপ্তানি নিয়ে এনবিআর ও ইপিবির তথ্যের গরমিল কেন হলো সেটি খুঁজে দেখতে হবে – মোহাম্মদ হাতেম, বিকেএমইএর সহসভাপতি। জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক রপ্তানি নিয়ে এনবিআর ও ইপিবির তথ্যের গরমিল কেন হলো সেটি খুঁজে দেখতে হবে। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগস্টে ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়াও কঠিন। গত দুই-তিন দিনে বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। একজন ছাড়া বাকিরা জানান, গত বছরের আগস্টের চেয়ে তাঁরা কম রপ্তানি করেছেন। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৬৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। শুধু আগস্টে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৯৬ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ।