করোনাভাইরাসের কারণে গত এপ্রিল ও মে মাসে ভয়াবহ ধসের পর জুন থেকে আবার পণ্য রপ্তানি বাড়তে শুরু করে। জুলাইয়ে তো ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। আগস্টে অবশ্য তা কিছুটা কমে। তবে সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আবার ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের পণ্য রপ্তানিতে ধীরে ধীরে গতি ফিরছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে) ৯৮৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ৯৬৬ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। আবার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৩০১ কোটি ডলারের পণ্য। এই আয় গত বছরের একই সময়ের ২৯১ কোটি ডলারের তুলনায় ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পণ্য রপ্তানি আয় বেশি হওয়াটা সুসংবাদ। শিল্পমালিকদের প্রচেষ্টা, শ্রমিকের পরিশ্রম ও সরকারি দপ্তরগুলোর যথাযথ উদ্যোগের কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পণ্য রপ্তানি আয় বেশি হওয়াটা সুসংবাদ। শিল্পমালিকদের প্রচেষ্টা, শ্রমিকের পরিশ্রম ও সরকারি দপ্তরগুলোর যথাযথ উদ্যোগের কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা, তা ছাড়িয়ে যাবে।’বিজ্ঞাপন
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট পণ্য রপ্তানির ৮২ শতাংশই পোশাক খাত থেকে এসেছে। রপ্তানির পরিমাণ ৮১২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য, হস্তশিল্প এবং চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত এবং প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট পণ্য রপ্তানির ৮২ শতাংশই পোশাক খাত থেকে এসেছে। রপ্তানির পরিমাণ ৮১২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ওভেন পোশাকে অবশ্য রপ্তানি কমেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৭ শতাংশ, তবে ওভেন পোশাকে কমেছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
করোনায় একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় গত এপ্রিলে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারে নেমে পড়ে। পরের মাসে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ায়। তবে রপ্তানি হয় ১২৩ কোটি ডলারের পণ্য। জুনে এক লাফে তা ২২৫ কোটি ডলারে ওঠে। জুলাই ও আগস্টে রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩২৪ ও ২৪৬ কোটি ডলার। আর সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ২৩৪ কোটি ডলারের পোশাক।বিজ্ঞাপন
করোনার প্রথম ধাক্কার পর পোশাকের ক্রয়াদেশ আসা শুরু করেছিল। তবে ইউরোপে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় ক্রেতারা আবারও ক্রয়াদেশ দিতে চিন্তাভাবনা করছে।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম
জানতে চাইলে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কার পর পোশাকের ক্রয়াদেশ আসা শুরু করেছিল। তবে ইউরোপে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় ক্রেতারা আবারও ক্রয়াদেশ দিতে চিন্তাভাবনা করছে। সে কারণে ক্রিসমাসকে কেন্দ্র করে বর্তমানে কারখানাগুলোতে যে পরিমাণ কাজ থাকার কথা ছিল, সেটি নেই। সক্ষমতার ৮০ শতাংশের কাছাকাছি চলছে অধিকাংশ কারখানা। এ জন্য সামনের কয়েক মাসে রপ্তানিতে খুব ভালো না–ও হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে বছরের পর বছর ধরে লোকসানের কারণে সরকারি পাটকল বন্ধ করেছে সরকার। তবে করোনায় অন্য বড় খাতের রপ্তানি কমলেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। গত মাসেও সেটি অব্যাহত থাকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।বিজ্ঞাপন
বড় খাতের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ২৭ কোটি ডলারের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৫ কোটি ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ১৩ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
অবশ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। জুলাই–সেপ্টেম্বর সময়ে ২২ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের চামড়া, ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের চামড়াজাত পণ্য ও ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের চামড়ার জুতা। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে।
ছোট খাতগুলোর মধ্যে ৩ কোটি ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানির বিপরীতে ২৮ শতাংশ এবং ৮০ লাখ ডলারের হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানিতে ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।